
কী খাচ্ছেন, নজর দিন। দিনের পর দিন চিপস, চাউমিন, বার্গার, কেকের মতো খাবার খেতে থাকলে বয়সের আগেই বুড়িয়ে যাবেন। বার্ধক্যকে পৌঁছানোর আগেই আপনি ৩২ রকমের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এমনটা দাবি জানাচ্ছে একটি নতুন গবেষণা। সম্প্রতি বিএমজে জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। সেখানেই দেখা গিয়েছে, নিয়মিত আলট্রা-প্রসেসড ফুড খেলে ওবেসিটি, হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য ক্রনিক অসুখ সহ ৩২ রকমের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। ক্যানসারের মতো মারণ রোগও রয়েছে এই তালিকায়। সুতরাং, এখনই সচেতন না হলে বিপদ আপনারই।
কোন খাবারগুলো আলট্রা-প্রসেসড ফুড ফুড এবং সেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য কেন উপযুক্ত নয়, এর উত্তর খুঁজতে TV9 বাংলা ডিজিটাল তরফে যোগাযোগ করা হয় পুষ্টিবিদ অরিজিৎ দে-এর সঙ্গে। পুষ্টিবিদের বলেন, “আলট্রা-প্রসেসড ফুড বলতে বোঝায় যে সব খাবার ‘রেডি টু মেক’ (Ready to make)। এর মধ্যে বেকড ফুড, প্যাকেটজাত খাবার, বিভিন্ন মিষ্টি স্বাদের পানীয় ইত্যাদি রয়েছে। এসব খাবার অত্যধিক পরিমাণে ফ্যাট, নুন ও চিনি রয়েছে। পাশাপাশি এই ধরনের খাবারে বিভিন্ন কৃত্রিম রং, ফ্লেভার মেশানো হয়।” এসব খাবারে আদৌ কি কোনও পুষ্টি রয়েছে? এই প্রসঙ্গে অরিজিৎ বলেন, “আলট্রা-প্রসেসড ফুডে ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেল থাকে না।” বেশিরভাগ খাবারগুলোই রিফাইন্ড চিনি, অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট, সোডিয়াম ও প্রিজারভেটিভ দিয়ে তৈরি হয়, যার কোনও গুণাগুণ নেই।
আলট্রা-প্রসেসড ফুড কতটা ক্ষতিকারক এই প্রসঙ্গে অরিজিৎ বলেন, “এই ধরনের খাবারে কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ে। অর্থাৎ, হার্টের অসুখ। রক্তনালির নানা গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়। যেমন রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল জমা হতে থাকে, ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়। এছাড়া টাইপ-২ ডায়াবেটিস রয়েছে এই তালিকায়।” এই ধরনের ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী রোগই কি একমাত্র জাঁকিয়ে বসে শরীরে? অরিজিতের কথায়, ক্রনিক অসুখের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাশাপাশি নিয়মিত আলট্রা-প্রসেসড ফুড খেলে লিভার, কোলন, পাকস্থলির মতো জরুরি অঙ্গগুলোর উপর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে। পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়।
ওজন বেড়ে যাওয়া, হৃদরোগের আক্রান্ত হওয়া, হজমজনিত সমস্যা বেড়ে যাওয়ার মতো একাধিক সমস্যা এড়াতে গেলে আলট্রা-প্রসেসড ফুড খাওয়া ছাড়তে হবে। আর এই কাজটা কীভাবে করবেন, টিপস দিচ্ছেন পুষ্টিবিদ অরিজিৎ দে। তিনি বলেন, “নিজেকেই সচেতন হতে হবে। আলট্রা-প্রসেসড ফুড আমরা তখনই খাই, যখন আমাদের হাতের কাছে ঘরের তৈরি খাবার নেই কিংবা বাড়ির তৈরি খাবার ভাল লাগে না। বাইরে যে খাবারটা আপনি কিনে খাচ্ছেন, সেটাই বাড়িতে বানিয়ে নিন। বাড়িতে খাবার বানালে তাতে কোনও প্রক্রিয়াজাত উপাদান ব্যবহার হয় না। এমনকি নুন-চিনিও স্বাদ বুঝে মেশানো হয়। ফলের রসও আপনি বাড়িতে বানিয়ে খান। এতে রোগের ঝুঁকি কমবে এবং দেহে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হবে না।”