
হিন্দু শাস্ত্র মতে যে কোনও শুভ কাজেই একটি জিনিস লাগে। সেটি হল শাঁখ। শাঁখে ফুঁ না দিলে হয় না। তবে শঙ্খে ফুঁ দেওয়া কেবল ভারতীয় আচার-অনুষ্ঠানের অঙ্গ বা প্রাচীন প্রথা নয়। শরীরের জন্যও এই নিয়মিত শাঁখ বাজানো বেশ উপকারী। এমনকি গবেষণা বলছে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার (OSA) মতো রোগ কমাতে সাহায্য করে শাঁখ বাজানো।
গবেষণায় বলছে, নিয়মিত শাঁখ বাজানোর অভ্যাস স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো রোগের উপসর্গ মোকাবিলার জন্য ভাল উপায়। ওষুধ বা অন্য কোনও চিকিৎসা যন্ত্র ছাড়াই এটি কার্যকর হতে পারে। OSA একটি ঘুম সংক্রান্ত রোগ, যা চিকিৎসা না করলে প্রাণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১০০ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে প্রায় ৯ থেকে ৩৮ জন OSA–তে ভোগেন। ২০২৩ সালে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (AIIMS), নয়াদিল্লির এক গবেষণায় বলা হয়, ভারতে কর্মক্ষম বয়সের প্রতি ১০০ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ১১ জন OSA–তে আক্রান্ত, যেখানে ঘুমের সময় প্রতি ঘণ্টায় অন্তত পাঁচবার শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যাহত হয়।
OSA আক্রান্তরা সাধারণত উচ্চস্বরে নাক ডাকেন, অশান্তভাবে ঘুমান, দিনে অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব অনুভব করেন এবং উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
OSA–এর বর্তমান মানসম্মত চিকিৎসা হলো continuous positive airway pressure (CPAP) নামক যন্ত্র। যা রোগীর শ্বাসনালি খোলা রাখে। এই নিয়ম কার্যকর হলেও, অনেক রোগী একে অস্বস্তিকর মনে করেন।
শাঁখে ফুঁ দিলে যা কাজটি হয় তা যোগ ব্যয়ামে শ্বাস-প্রশ্বাস প্র্যাক্টিস করার সমান। চিকিৎসকরা জানান, OSA রোগী, যারা নিয়মিত শাঁখে ফুঁ দেন, তাঁরা রাতে ভাল ঘুমাতে পারেন।
গবেষণায় ১৬ জন OSA রোগীকে শঙ্খে ফুঁ দিতে বলা হয় এবং ১৪ জন রোগীকে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করতে বলা হয়। প্রতিদিন ১৫ মিনিট করে, সপ্তাহে পাঁচদিন, ছয় মাস ধরে এ অনুশীলন চলে।
ফলাফলে দেখা যায়, শঙ্খে ফুঁ দেওয়া রোগীরা ৩৪ শতাংশ কম ঘুম ঘুম অনুভব করেছেন, ভাল ঘুমিয়েছেন এবং গভীর শ্বাসের অনুশীলনকারীদের তুলনায় প্রতি ঘণ্টায় চার থেকে পাঁচবার কম শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা পেয়েছেন।
আসলে শাঁখে ফুঁ দিতে হলে গভীরভাবে শ্বাস নিতে হয়। তারপর জোরে ও দীর্ঘক্ষণ শ্বাস ছাড়তে হয়। এ সময় শ্বাস ছাড়ার পুরো সময়জুড়ে চাপ বজায় রাখতে হয়। এই ক্ষেত্রে শ্বাসনালির ওপরের অংশের পেশি শক্তিশালী হয়। যা OSA রোগীদের ঘুমের সময় অত্যন্ত কার্যকর।