
সাধারণভাবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ফল খাওয়া নিয়ে অনেক সংশয় থাকে, বিশেষত মিষ্টি ফল যেমন আম। কারণ আমে প্রাকৃতিক চিনি (ফ্রুকটোজ) থাকায় অনেকেই মনে করেন এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে বাস্তবতা হল—পরিমিত ও সঠিক পদ্ধতিতে খেলে আম ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারীও হতে পারে। আয়ুর্বেদ ও আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞানের মতে, পাকা আমের কিছু নির্দিষ্ট গুণাগুণ রয়েছে যা সুগার রোগীদের শরীরের নানা দিক থেকে সাহায্য করে।
১. ফাইবারে ভরপুর – হজমে সহায়ক ও শর্করার শোষণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
আমে থাকে প্রাকৃতিক ফাইবার, যা অন্ত্রের গতি বাড়ায় ও হজম শক্তি বাড়ায়। ফাইবার শর্করার শোষণ ধীরে করে, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যায় না।
২. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
আমে থাকা বেটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন C ও ফাইটোকেমিক্যালস শরীরের কোষ রক্ষা করে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জটিলতা কমাতে পারে।
৩. লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI)
পরিমিত পরিমাণে খেলে আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তুলনামূলকভাবে মাঝারি পর্যায়ে থাকে (৪৫–৬০), যা রক্তে শর্করার মাত্রায় হঠাৎ ওঠানামা করে না।
৪. ইনসুলিন কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে
আমপাতা ও কাঁচা আম ইনসুলিন উৎপাদন ও কার্যকারিতার উন্নতিতে সাহায্য করে বলে আয়ুর্বেদে বলা হয়। অনেকে সকালে আমপাতার রস খেয়ে থাকেন সুগার নিয়ন্ত্রণে।
৫. হৃদযন্ত্র ও চোখের জন্য ভালো
ডায়াবেটিস রোগীদের হৃদযন্ত্র ও চোখ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমে থাকা ভিটামিন A, C ও E এই অঙ্গগুলোর সুরক্ষায় কার্যকর।
কীভাবে খাবেন?
দিনে অল্প—১/৪ থেকে ১/২ কাপ (প্রায় ৫০-৭৫ গ্রাম) পরিমাণে খাওয়া নিরাপদ
পেট ভরা অবস্থায় নয়—খালি পেটে বা হালকা খাবারের পর খান
পাকা, বেশি মিষ্টি আম না খেয়ে দেশি জাতের হিমসাগর বা ল্যাংড়া বেছে নিন
জুস নয়, গোটা আম খান—জুসে ফাইবার থাকে না ও গ্লুকোজ দ্রুত বেড়ে যেতে পারে
যাদের সুগার মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত বা ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আম খাওয়া উচিত।
সঠিক পরিমাণে ও সঠিকভাবে খেলে আম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য শুধু নিরাপদই নয়, বরং উপকারীও। এটি শরীরে প্রাকৃতিক পুষ্টি জোগায় এবং দীর্ঘমেয়াদে নানা জটিলতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। সবকিছুর মন্ত্র একটাই—“পরিমিতি ও সচেতনতা”।