ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার আগে কিংবা ঋতুস্রাব চলাকালীন কমবেশি সব মহিলাই তলপেটের যন্ত্রণায় ভোগেন। কিন্তু এমন বেশ কিছু মহিলা রয়েছেন, যাঁরা ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে সবচেয়ে বেশি তলপেটের যন্ত্রণায় ভোগেন। মূলত ডিসমেনোরিয়ার উপসর্গ হিসেবে তলপেটে যন্ত্রণা, পা-কোমরে যন্ত্রণা, ডায়ারিয়া, বমি ইত্যাদি হয়। কিন্তু ঋতুস্রাবের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনে কেন অসহ্য পরিমাণে পেটের যন্ত্রণা হয়? ঋতুস্রাবের সঙ্গে নিয়মিত রক্ত ও টিস্যু নির্গত হয়। যার জেরে অনেক সময় জরায়ুর পেশিগুলো জরায়ুতে রক্ত সরবরাহ ও অক্সিজেন বন্ধ করার জন্য সঙ্কুচিত হয়। যখন জরায়ুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পৌঁছায় না, তখন এখান থেকে রাসায়নিক নির্গত হতে থাকে, যার কারণে তলপেটে যন্ত্রণা হতে থাকে। যেমন প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন যা জরায়ুর সংকোচন বাড়ায়। এই ধরনের তলপেটে যন্ত্রণা পিরিয়ডের দ্বিতীয় দিন হয়। এটাও ডিসমেনোরিয়ার উপসর্গ।
এই ডিসমেনোরিয়ার উপসর্গ এতটাই তীব্র হয় যে, দৈনন্দিন কাজগুলো করাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। যখনই পিরিয়ডের দ্বিতীয় দিন অহস্য তলপেটে যন্ত্রণা শুরু হয়, তখন উঠে দাঁড়ানোও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এই তলপেটে যন্ত্রণাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এমন টোটকা খুঁজে নিন, যা আপনার জীবনযাত্রাকে সহজ করে তুলবে। এই সময় কী-কী করবেন আর কোন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলবেন, রইল টিপস।
১) তলপেটে গরম সেঁক দিন- গরম সেঁক দিলে এটি পেশির স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। এতে পিরিয়ডের সময় তলপেটে ব্যথা সহজেই কমানো যায়। তলপেটে আপনি হট ব্যাগ দিয়ে সেঁক দিতে পারেন।
২) ক্যাফেইনের পরিমাণ কমান- ঋতুস্রাব চলাকালীন চা-কফি খাওয়ার পরিমাণ কমান। চা-কফির মধ্যে ক্যাফেইনের পরিমাণ বেশি থাকে। এমনকী ডার্ক চকোলেটের মধ্যেও ক্যাফেইন থাকে। এই ক্যাফেইন আপনার রক্তনালীগুলোকে সরু করে দেয়। এর জেরে জরায়ু সঙ্কুচিত হয় এবং তীব্র পেটের যন্ত্রণা হয়। তাই পিরিয়ড চলাকালীন চা-কফি এড়িয়ে চলুন।
৩) জোয়ান- জোয়ান শুধু যে হজমে সাহায্য করে, তা নয়। পিরিয়ডের সময় তলপেটের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে জোয়ান। জোয়ানের মধ্যে কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, প্রোটিন, ফাইবার, স্যাপোনিন এবং ক্যালসিয়াম, আয়রন, আয়োডিন, ম্যাঙ্গানিজ এবং থায়ামিনের মতো খনিজ পদার্থ রয়েছে।
৪) মরশুমি খাবার খান- যেহেতু এখন গরমকাল, তাই এই মরশুমের তাজা শাকসবজি, ফল বেশি করে খান। তাজা শাকসবজি, ফল খেলে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়। পাশাপাশি এসব খাবারে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা পিরিয়ড চলাকালীন ব্যথা-যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে।
৫) হাইড্রেটেড থাকুন- শরীরে জলের ঘাটতি থাকলে পেশির যন্ত্রণা আরও বাড়তে পারে। পিরিয়ডের ক্র্যাম্প কমাতে প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন। এতে দেহে রক্ত প্রবাহ সচল থাকে এবং পেশি শিথিল হয়। এতে তলপেটের যন্ত্রণা কমে।
৬) যোগব্যায়াম করুন- পিরিয়ডের সময় অনেকেই যোগব্যায়াম বা ওয়ার্কআউট করা এড়িয়ে চলেন। কিন্তু পেশির ক্র্যাম্প কমাতে যোগব্যায়াম দারুণ কার্যকর। এসব ওয়ার্কআউট করলে পেশিতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং তলপেটের যন্ত্রণা কমে।