বিশ্বজুড়ে ক্রমেই বেড়ে চলেছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। উৎসবের মরশুমে কোনও রকম নিয়ম বিধি না মানাকেই সমস্যার মূলে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বড়দিনের ছুটিতে প্রচুর মানুষ বেড়াতে গিয়েছেন। করোনা বিধি তোয়াক্কা না করেই হই হুল্লোড়ে মেতেছেন। বেশির ভাগেরই মুখে ছিল না মাস্ক। সেই সঙ্গে সামাজিক দূরত্ববিধিও মানেননি অনেকে। ওমিক্রন সংক্রমনের মধ্যে দিয়েই কোভিডের তৃতীয় তরঙ্গের ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের কথায়, আমরা এখন তৃতীয় তরঙ্গের মধ্যে রয়েছি। তবে এর আগে বলা হচ্ছিল ওমিক্রনের সংক্রমণে শরীরে কমছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যে কারণে বুস্টার ডোজের উপর জোর দিয়েছেন সকলেই। পশ্চিমের দেশগুলিতে বুস্টার ডোজ নিয়েও কিন্তু অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন ওমিক্রনে। আর তাই এদেশের এবার টিকার তৃতীয় ডোজের তোড়জাড় চলছে। টিকাকরণের জন্যই কিন্তু এড়ানো গিয়েছে কোভিড মৃত্যুর ঝুঁকি একথাও স্বীকার করেছেবন প্রায় সকলেই। ভ্যাকসিন ছাড়া আপাতত আমাদের হাতে আর অন্য কোনও অস্ত্র নেই। যে কারণে কিন্তু টিকাকরণ এতটা গুরুত্বপূর্ণ। কোভিডের সঠিক প্রতিকার এখনও আমাদের হাতে নেই। চিকিৎসকরা রোগের কিছু উপসর্গ কমানোর মত ওষুধ দিচ্ছেন মাত্র।
এর আগে কোভিডের দুটি ঢেউয়ে অনেক রকম ওষুধ কিন্তু পরীক্ষামূলক ভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। বেশ কিছু ওষুধ যেমন কাজে এসেছিল তেমনই অনেক ওষুধ থেকে পরবর্তীতে তৈরি হয়েছিল রোগ জটিলতা। যে কারণে বেশ কিছু ওষুধ কিন্তু পরবর্তীতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আইভরমেক্টিন (Ivermectin), হাইড্রক্সিক্লোরোক্যুইন (Hydroxychloroquine) এবং লোপিনাভির এইসব ওষুধ কিন্তু গোড়ার দিকে চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল।
কিন্তু পরবর্তীতে চিকিৎসকেরা এই সব ওষুধের ব্যবহারে বাধা দেন এবং চিকিৎসা প্রোটোকলের বাইরে ওষুধগুলিকে রাখেন। যদিও গত বছর যাঁরা গুরুতর আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁদের চিকিৎসায় রেমডিসিভির ব্যবহার করা হয়েছিল। এবং কাজও হয়েছিল। এছাড়াও যাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল তাঁদের স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছিল। স্টেরয়েড কিন্তু শুধুমাত্র শরীরের জ্বালা, অস্বস্তি এসব কমায়। রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে না। তবে সংক্রমনের জন্য শরীরে যে সব উপসর্গ তৈরি হয় তা কিছুটা হ্রাস করে।
ডেল্টায় যাঁরা সংক্রমিত হয়েছিলেন এবরং জটিল অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন তাঁদের প্রায় সকলকেই স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছিল। বেশ কয়েকটি পরীক্ষার পর দেখা গিয়েছিল এই স্টেরয়েড হার্টকেও সুরক্ষিত রাখে। কিন্তু এই স্টেরয়েডের এমনই ব্যবহার করা হয় যে পরবর্তীতে যে খান থেকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সমস্যা তৈরি হয়। সম্প্রতি দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় পর্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমনই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সম্প্রতি বাজারের এসেছে কোভিড পিল। এই পিল শরীরকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচায়, ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় এমনটাই প্রমাণিত হয়েছে। তবে এই পিলের ব্যবহার কিন্তু সীমিত। খুব জরুরি কোনও পরিস্থিতি তৈরি না হলে এই পিল দেওয়া হয় না।
যাঁদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৩ এর নীচে নেমে গিয়েছে একমাত্র তাঁদের ক্ষেত্রেই কিন্তু ব্যবহার করা হয়েছে এই পিল। তবে সম্প্রতি কোভিড পিল এসেছে ভারতের বাজারেও। মাত্র ১,৩৯৯ টাকায় পাঁচটা ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। তবে ওষুধটি শুধুমাত্র হালকা থেকে মাঝারি সংক্রমণের জন্য। রেড্ডিজ, ন্যাটকো, মাইলান প্রভৃতি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা এই ওষুধটি বানাচ্ছে। তবে এই অ্যান্টিভাইরাল পিল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের প্রধান উপদেষ্টা চিকিৎসক বলরাম ভার্গব। তিনি বলেছেন এই ওষুধ কিন্তু পেশি আর হাড়ের ক্ষতি করতে পারে। তবে আমেরিকায় যে সমস্ত ওরাল পিল তৈরি করেছে ফাইজার তা কিন্তু ইতিমধ্যেই ব্যবহার করা হচ্ছে।
তবে সব চিকিৎসকেরাই কিন্তু সব সময় বলছেন যে নিজেদের সচেতন থাকতে হবে। মাস্ক পরতেই হবে, ভিড় জায়গায় যাওয়া চলবে না। মিনিমান ৬ ফুটের দূরত্ব মেনে চলতেই হবে। এসব নিয়ম না মানলে কিন্তু সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না।