
মা হওয়া একটি সুন্দর অনুভূতি। কিন্তু এটা অনুভব করতে একজন মহিলাকে বেশ কয়েকটি সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সমস্যাগুলির গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে শুরু হয় এবং প্রসব পর্যন্ত কিংবা অনেক ক্ষেত্রে প্রসবের বেশ কয়েক দিন পর পর্যন্ত চলতে থাকে। এই সময়ে, সন্তানের নিরাপত্তা এবং নিরাপদ প্রসব নিয়েও চিন্তিত থাকেন।
প্রসব ব্যথা এড়াতে আজকাল বেশিরভাগ মহিলারাই সিজারিয়ান ডেলিভারির বিকল্প বেছে নিতে পছন্দ করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, নরম্যাল ডেলিভারিতে মহিলাকে যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়, তবে এতে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। এছাড়াও, নরম্যাল ডেলিভারি মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই খুব উপকারী বলে প্রমাণিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক এর উপকারিতা সম্পর্কে।
প্রসবের পর একজন মহিলার দায়িত্ব বহুগুণ বেড়ে যায়। এই সময় তাঁর সন্তানের খেয়াল রাখার পাশাপাশি তাঁর নিজেরও খেয়াল রাখতে হয়। তাই এই সময় মায়ের পুরোপুরি সুস্থ থাকা দরকার। নরম্যাল ডেলিভারি মাকে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। এরই সঙ্গে মায়ের প্রসবের যন্ত্রণা তখনই শুরু হয় যখন গর্ভে থাকা শিশু জন্মের জন্য প্রস্তুত। এতে শিশুটি সম্পূর্ণরূপে তৈরি হয়ে ভূমিষ্ঠ হয়। নরম্যাল ডেলিভারির পর বেশিদিন হাসপাতালেও ভর্তি থাকতে হয় না। শীঘ্রই তাঁর শরীর স্বাভাবিক অবস্থায় আসে। এর সঙ্গে পরবর্তী গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
স্বাভাবিক প্রসবের ফলে শিশুও অনেক সুবিধা পায়। প্রসবের সময়, মহিলার শরীরে অনেক হরমোন নিঃসৃত হয়। নরম্যাল ডেলিভারিতে শিশুর বুক পরিষ্কার থাকে এবং এতে শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। এছাড়াও, নরম্যাল ডেলিভারির দ্বারা জন্ম নেওয়া শিশুরা মাইক্রোবায়োম নামক একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যাকটেরিয়া পায় যা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কোন কোন উপায় মেনে চললে নরম্যাল ডেলিভারিতে আপনার কোনও সমস্যা হবে না চলুন জেনে নেওয়া যাক।
গর্ভাবস্থায় মিষ্টি বা মশলাদার খাবার খাওয়ার ইচ্ছা জাগে অনেকেরই মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে খিদে বা ক্রেভিং দূর করতে চকোলেট, চাইনিজ, পিজ্জার মতো অস্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন না। এটি আপনার শরীরে জলের ধারণক্ষমতা বাড়ায়। এর বদলে স্বাস্থ্যকর খাবার খান। অতিরিক্ত মশলাদার এবং তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। চিনি জাতীয় খাবার কম খান, কারণ এই সময় ডায়বেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
গর্ভাবস্থায় সব মহিলাই বেশি কাজ করেন না। কিন্তু গর্ভাবস্থায় আপনি যত বেশি সক্রিয় থাকবেন, স্বাভাবিক ভাবে প্রসবের সম্ভাবনা তত বাড়বে। তবে ভারী জিনিস উত্তোলন বা বেশি ওঠা-নামার কাজ করবেন না। এছাড়া কোনও জটিলতা থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় ওজন বৃদ্ধির কারণে মহিলাদের পেশী শক্ত হয়ে যায়, যার কারণে তারা স্বাভাবিক প্রসবের চাপ সহ্য করতে পারে না। এর জন্য মহিলাদের তেল মালিশ করা উচিত যাতে তাদের শরীর স্বাভাবিক প্রসবের জন্য প্রস্তুত হতে পারে। এছাড়া ওজন যাতে অতিরিক্ত বেড়ে না যায় সেই দিকে খেয়াল রাখুন।
অতিরিক্ত ওজন প্রেগন্যান্সি ছাড়াও বেশ কয়েকটি রোগের ঝুঁকি নিয়ে আসে। এর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ। সাধারণত এই সময় রক্তচাপ ওঠা-নামা করে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এই সময় ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করুন এবং মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন। এই জন্য ভালো বই পড়ুন, গান শুনুন বা আপনার পছন্দের যেকোনও কাজ করুন।
আরও পড়ুন: জানেন কি ডাউন সিনড্রোম শিশুদের মধ্যে আর্থ্রাইটিসের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে?