
মাংসখেকো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে আরজি কর হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা মৃন্ময় রায়। আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৪৪ বছরের মৃন্ময়। মধ্যবয়সি ওই ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তির কিছু দিন আগে থেকেই মিশ্র সংক্রমণের জেরে ত্বকের নীচে ফ্যাসাইয়ে মারণ প্রদাহ (নেক্রোটাইজিং ফ্যাসাইটিস) নিয়ে ভুগছিলেন। এই মিশ্র ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণটি বিরল মাংসখেকো বা ফ্লেশ-ইটিং ব্যাকটেরিয়া নামে পরিচিত চিকিৎসাবিজ্ঞানে। এই মাংসখেকো ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত ধরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে পচন ধরতে শুরু করে এবং অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। আর পরিণাম হয় মৃত্যু। মাঝবয়সি ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছিল। গত শুক্রবার রাত সাড়ে দশটার সময় তিনি মারা যান।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, কিছু আগে ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে বাঁ পায়ে আঘাত পান মৃন্ময়। তাঁর পায়ে লোহার রড ঢুকে গিয়েছিল। জরুরি অবস্থায় প্রথমে তাঁকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু পায়ের ক্ষত কোনওভাবেই সেরে উঠছিল না। বরং পা থেকে শরীরের অন্যান্য অঙ্গে পচন বাড়তে শুরু করছিল। তখন তাঁকে তড়িঘড়ি আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, মৃন্ময় নেক্রোটাইজিং ফ্যাসাইটিস রোগে আক্রান্ত। প্রবল শ্বাসকষ্টের জন্য ভেন্টিলেশনে রাখা হয় মৃন্ময়কে। অবশেষে, তিনি মারা যান।
কী এই ফ্লেশ-ইটিং ব্যাকটেরিয়া?
ফ্যাসাইটিসে প্রথমে ত্বকের নিচে থাকা নরম টিস্যুতে পচন ধরে। তারপর ধীরে ধীরে সংলগ্ন পেশিতেও পচন ধরতে শুরু করে। দু’-তিন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার মিলিত সংক্রমণে এমনটা ঘটে। ফ্লেশ-ইটিং ব্যাকটেরিয়া দেহে বাসা বাঁধলে শরীরে মারাত্মক যন্ত্রণা হয়। পাশাপাশি জ্বর হয়। ফ্যাসাইটিসে আক্রান্ত হলে এবং শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পচন ধরলে দ্রুত ওই অঙ্গ কেটে বাদ দিতে হয়। এটাই তখন রোগীকে বাঁচানোর একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়ায়।
কারা এই রোগের শিকার হন?
মূলত যে সব ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কম তাঁদের মধ্যে ফ্লেশ-ইটিং ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও যাঁদের ডায়াবেটিস, ক্যানসার, রক্তজনিত রোগ কিংবা স্টেরয়েড ব্যবহার করে তাঁদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তবে এই রোগ বিরল। আপনার সুগার রয়েছে বলেই যে আপনি এই রোগে আক্রান্ত হবেন এমন কোনও যুক্তি নেই। এমন প্রতি আড়াই লক্ষ ব্যক্তির মধ্যে গড়ে একজন মাংসখেকো ব্যাকটেরিয়ার শিকার হয়ে পড়েন। মাংসখেকো ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলে যে মৃত্যু হবে, তাও নয়। এই রোগে মৃত্যুর আশঙ্কা প্রায় ৫০ শতাংশ।