করোনা অতিমারির কারণে টানা ২ বছর সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। স্কুলে যাওয়ার পর থেকেই ছোট ছোট শিশুরা প্রায়শই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তবে বর্তমানে প্রি-স্কুলের শিশুরা এক নয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। শহর ও মফঃস্বলের চিকিত্সকদের কাছে শিশুদের অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুল থেকে বাড়ি আসার পর থেকেই বাচ্চার জিভে সাদা হয়ে ঘা বা ফোস্কার মত দেখা দিচ্ছে। হাতে ও পায়ে লাল রঙের ছোট ছোট র্যাশ বেরিয়ে চিকেন পক্সের (Chickenpox) মত আকার ধারণ করেছে। শুধু তাই নয়, প্রচণ্ড জ্বরে কাবু (Fever) হয়ে নেতিয়ে পড়ছে বাড়ির ছোট সদস্যরা। করোনার পাশাপাশি দেশে বাড়ছে মাঙ্কিপক্সের (Monkeypox Virus) আতঙ্ক। এবার শিশুদের মধ্যে চিকেনপক্সের মত ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে রীতিমত আতঙ্কিত অভিভাবকরা। তবে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত নন চিকিত্সকরা।
হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজে বেশিরভাগ শিশু আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। বেশিরভাগ বাচ্চাদের বাবা-মায়েরা এই ভাইরাসটিকে চিকেনপক্স ভেবে ভুলও করছেন বলে মন চিকিত্সকদের। শহরের ডাক্তারদের মতে, এই পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। দরকার শুধু সতর্কতা। সময়ের প্রয়োজনে আরও সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।
সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিদিন ১০-১৫টি শিশু এই সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করছেন বাবা-মায়েরা। তবে শিশু চিকিত্সকদের মতে, সত্যিটা হল প্রতি বছর বর্ষাকালে ভাইরাল সংক্রমণের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি থাকে। তার মধ্যে হাম, চিকেন পক্স, হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজের মত ভাইরাল রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।এই সব ক্ষেত্রে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। তবে সময়ের প্রয়োজনে সচেতন ও সতর্ক থাকা জরুরি। চিকেনপক্স, হাম ও এইচএফএমডির মত রোগে জিভে ফোসকা ও ত্বকের ফুসকুড়ির লক্ষণ রয়েছে।
এইচএফএমডির মূল সমস্যা হল শিশুর মুখে ছোট থেকে বড় ফোসকা পড়ে। তার ব্যথায় তারা সহজে খাবার গিলতে, জল পান করতে পারে না। সেই সময় শিশুদের মধ্যে খাবার ও জল পান না করার প্রবণতা তৈরি হয়, প্রস্রাব কমে যাওয়া, ক্রমাগত জ্বর আসা, সক্রিয় না থাকার মত উপসর্গ দেখা যায়। বিশেষ করে ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে এই সাধারণ সংক্রমণ দেখা যায়। যদিও এর কোনও ভ্যাকসিন নেই। এই সংক্রমণ প্রায় ৭ থেকে ১৪দিন স্থায়ী হয়। HFMD-এর ইনকিউবেশন সময়কাল প্রায় ৩-৭ দিন। এছাড়া আর্দ্র আবহাওয়ায় এর বিস্তার করে বেশি।
এই অসুখের কোনও নির্দিষ্ট চিকিত্সা নেই। তবে ওষুধেই সেরে যায় সময়মত। শিশুরা ভাইরাসে সংক্রমিত হলে মুখ, নাক, জিভ বা লালা থেকে নিঃসৃত ক্ষরণের মাধ্যমে সরাসরি অপর শিশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এটি প্রতিরোধ করার সবচেয়ে কঠিন ও শক্তিশালী উপায় হল বাচ্চাকে সুরক্ষিত রাখা। তবে প্রাথমিক লক্ষণগুলি চিনে, সঠিক যত্ন নিলে দ্রুত নিরাময় হতে সক্ষম।
শিশু বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন যে এইচএফএমডি ছাড়াও আর্দ্র জলবায়ু অন্যান্য ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের বিস্তারের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করে। ফলে অসংখ্য সংক্রমণ ঘটায় এই সময়। তবে বাবা-মায়েরা এতে আতঙ্কিত হবেন না। প্রাথমিক লক্ষণগুলি দেখলেই শিশুকে নিয়ে শিশু চিকিত্সক বা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান।