শোভন রায়: অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে শুরু করে আরও নানা কারণেই পুরুষদের ক্ষেত্রে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন লক্ষ্য করা যায়। এই অবস্থার কারণ বা নিরাময়ের উপায় নিয়ে আলোচনা করার আগে আমাদের যা জেনে নিতে হবে তা হল, এই সময় একটা বিশেষ বয়সের পুরুষদের মধ্যে মানসিক অবস্থা কেমন হতে পারে। ১৬ থেকে ২৬ বছর বয়সে পুরুষদের যৌন বাসনা বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যায়। ইচ্ছে থেকে শুরু করে অনুভূতি- সবটাই টের পাওয়া যায় এই বয়সে। আর তাই এই বয়সী কোনও পুরুষের মধ্যে যদি যৌন ইচ্ছা না থাকে বা তিনি ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের শিকার হন, সেক্ষেত্রে তাঁর কীভাবে দেখা উচিত বিষয়টিকে?
উত্তর জানতে আমরা কথা বলেছিলাম, প্যাভলভ হাসপাতালের মনস্তত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ডঃ শর্মিলা সরকারের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে অনেকেই ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের কারণে ডিপ্রেশনের মধ্যে চলে যান। কারণ আর কিছুই না। সমস্ত সম্পর্কের ক্ষেত্রে সঙ্গম খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে সঙ্গীর চাহিদা পূরণ করতে না পারার জন্যই এই হতাশা আসে। তিনি আরও যোগ করে বলেন, ‘১৬ থেকে ২৬ বয়সের অধিকাংশ পুরুষই অবিবাহিত থাকেন। সেক্ষেত্রে তাঁরা এই রকম সমস্যার সম্মুখীন হলে আগে কাছের কোনও মানুষের সঙ্গে মন খুলে কথা বলুন। বাবা, মা, বন্ধু- যেই হোক না কেন। এই ধরনের সমস্যার কথা চেপে রাখলে পরবর্তীতে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।’
আবার অনেক পুরুষই ভেবে থাকেন, অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের কারণেও লিঙ্গ দুর্বল হতে পারে। সে বিষয়ে ডঃ সরকারের মন্তব্য, ‘কারণ একাধিক হতে পারে। এমনকী হস্তমৈথুনের সময় নিজেকে লুকিয়ে রাখা বা ভয় পাওয়াও এর জন্য দায়ী হতে পারে। কারণ অনুসন্ধানের আগে নিজের অসুবিধার কথাটা বলে দেওয়া সবচেয়ে জরুরি।’ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকা নিয়েও সরব হয়েছিলেন ডঃ শর্মিলা সরকার। স্কুল পর্যায়ে সেক্স এডুকেশনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে তিনি জানান, বাচ্চাদের যা কিছু অনুসন্ধিৎসা থাকে এই বিষয়ে, তা যদি ওরা জিজ্ঞেস করতে পারে, তাহলেই কিন্তু অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। প্রশ্ন চেপে রাখলেই আগামীদিনে মারাত্মক বিপদের পথ তৈরি হয়। আর এই কারণেই পড়ুয়াদের সঙ্গে তাদের বাবা-মা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা সবারই একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা উচিত।’
ইরেক্টাইল ডিসফাংশন থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন-
প্রতিদিনের ডায়েটে রাখুন বাদাম:
কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাট যেমন ওমেগা থ্রি ,ফ্যাটি অ্যাসিড এগুলোর জন্য সবচেয়ে ভালো উৎস বাদাম। এই ওমেগা থ্রি ,ফ্যাটি এসিড পুরুষদের টেস্টোস্টেরন এর ক্ষরণ ঘটাতে সাহায্য করে। সুতরাং প্রত্যেকদিন সকালের খাবারে যথেষ্ট পরিমাণে বাদাম রাখার চেষ্টা করুন।
ট্রিবুলাস টেরেস্ট্রিস:
এটি হল পুরুষদের মধ্যেকার যৌন সমস্যার সমাধানের সব থেকে ভাল উপায়। ভারতীয় এবং চিনা শাস্ত্রে বহু বছর ধরে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন এবং শীঘ্রপতনের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয় এই পদ্ধতি। এর মাধ্যমে পুরুষদের শরীরে যথেষ্ঠ পরিমাণ টেস্টোস্টেরনের মাত্রা ব়দ্ধি পায়, যা ইরেকশনে সাহায্য করে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন:
যদিও সব রকমের ব্যায়ামই শরীরে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, তাও শক্তি বৃদ্ধির ট্রেনিং টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যা আপনার ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। সপ্তাহে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ দিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ব্যায়াম করতে হবে। জোর দিন পায়ের বিভিন্ন ব্যায়ামে। কারণ টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে এই ব্যায়াম বেশি ভালো কাজ করে। স্কোয়াট এবং ল্যান্জেস্ও রাখুন প্রতিদিনের শরীরচর্চায়।