
শীতের আরামদায়ক আবহাওয়ায় আমাদের জল তেষ্টা (Water Drinking) যেন অনেকটাই কমে যায়। গরমকালে যেখানে আমরা ঘন ঘন জলপান করি, সেখানে শীত এলেই জল পানের পরিমাণ কমে গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় অর্ধেকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সঙ্গে শরীরের জলের চাহিদার কোনও সম্পর্ক নেই। মানবদেহের কোষের প্রধান উপাদান জল, আর তাই শীতেও হাইড্রেটেড থাকা গ্রীষ্মের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।
শীতকালে যদি আপনি পর্যাপ্ত জলপান না করেন, তাহলে কী কী সমস্যা হতে পারে এবং দৈনিক কতটা জল পান করা উচিত, জেনে নিন সেই বিষয়ে পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকদের পরামর্শ।
অনেকে মনে করেন, শীতকালে ঘাম হয় না, তাই জল কম খেলেও চলে। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বেশ কয়েকটি কারণে শীতেও জলের ঘাটতি বাড়ে। যেমন –
তৃষ্ণা কমে যাওয়া: ঠান্ডা আবহাওয়ায় মস্তিষ্কের তৃষ্ণা জানানোর প্রক্রিয়াটি দুর্বল হয়ে যায়।
শুষ্ক বাতাস: শীতকালের বাতাস শুষ্ক হওয়ায় নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীর থেকে বেশি জলীয় বাষ্প বেরিয়ে যায়।
রোগের ঝুঁকি: জল কম খাওয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমের সমস্যা, ত্বকের শুষ্কতা এবং মূত্রনালীর সংক্রমণ এর আশঙ্কা বাড়ে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অসুস্থতা বা অন্য কোনও ক্রনিক সমস্যা না থাকলে সারাবছরই জলের চাহিদা মোটামুটি একই থাকে। একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য দৈনিক ২.৫ থেকে ৩ লিটার তরল (জল, স্যুপ, বা অন্যান্য পানীয় সহ) গ্রহণ করা উচিত। এটি প্রায় ১০ থেকে ১২ গ্লাস জলের সমান।
ওজনের ভিত্তিতে: নিজের ওজন অনুযায়ী দৈনিক জলের পরিমাণ হিসেব করতে পারেন। আপনার মোট ওজন (কেজি-তে) যদি ৩০ দিয়ে ভাগ করেন, তবে যে ফল বের হবে, সেই পরিমাণ (লিটার-এ) জল অন্তত পান করা উচিত। যেমন, ৬০ কেজি ওজনের কোনও ব্যক্তির দৈনিক ২ লিটার জল প্রয়োজন।
শীতকালে জল পান করতে ইচ্ছা না করলেও এই অভ্যাসগুলি আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
উষ্ণ পানীয় বেছে নিন: ঠান্ডা জলের বদলে হালকা গরম জল, আদা-তুলসী চা, বা ভেজিটেবল ব্রথ (Soup) পান করুন। উষ্ণ পানীয় শরীরকে গরম রাখতে এবং হজমে সাহায্য করে।
জল সমৃদ্ধ খাবার খান: খাদ্যতালিকায় কমলালেবু, মুসাম্বি, টমেটো, শসা এবং বিভিন্ন শাক-সবজি যোগ করুন, কারণ এই খাবারগুলিতে প্রচুর পরিমাণে জল থাকে।
রুটিন তৈরি করুন: যেখানে কাজ করেন বা ঘুমোন, সেখানে সবসময় জলের বোতল বা গ্লাস হাতের কাছে রাখুন। তৃষ্ণা না পেলেও নির্দিষ্ট সময় অন্তর অল্প অল্প করে জলপান করুন।
ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পান কমান: চা বা কফির মতো পানীয় অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায়। তাই প্রতি কাপ কফি বা চায়ের জন্য এক গ্লাস অতিরিক্ত জল পান করুন।
রং পরীক্ষা করুন: প্রস্রাবের রং যদি হালকা বা খড়ের মতো হয়, তবে বুঝবেন শরীর পর্যাপ্ত হাইড্রেটেড। যদি গাঢ় হলুদ হয়, তবে জলের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন।