ভারতে বেশিরভাগ সময় গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া থাকে। আর যেখানে এই ধরনের আবহাওয়া বেশি, সেখানে সুস্থ থাকার একমাত্র উপায় হাইড্রেশন—শরীরে জলের অথবা আরও স্পষ্ট করে বললে তরলের সরবরাহ ঠিকঠাক বজায় রাখা। কিন্তু ভারতেই ‘সাইলেন্ট ডিহাইড্রেশন’-এর সমস্যা সবচেয়ে বেশি। শরীরে যে জলের ঘাটতি রয়েছে, এটাই অনেকেই বুঝতে পারেন না। এই অবস্থাকেই ‘সাইলেন্ট ডিহাইড্রেশন’ বলা হয়। আর ডিহাইড্রেশন হল এমন একটি অবস্থা, যেখানে দেহে তরলের ঘাটতি তৈরি হয়। অত্যধিক ঘেমে যাওয়া, ডায়ারিয়া, বমি, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান না করা—নানা কারণে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যখন দেহে জলের ঘাটতি তৈরি হয়, তখন সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ক্লোরাইডের মতো ইলেকট্রোলাইটেরও ঘাটতি তৈরি হয়। এই ইলেকট্রোলাইটগুলো দেহে কোষের কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, যখন শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায় এবং ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি তৈরি হয়, তখনই নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে সমস্যা হল, তাঁরা অনেকেই এই ডিহাইড্রেশনের লক্ষণগুলো প্রাথমিক অবস্থায় বুঝতে পারেন না। অবস্থার অবনতি ঘটলে তখনই নড়েচড়ে বসেন সকলে। শরীরে তরলের ঘাটতি তৈরি হলে বারবার তেষ্টা পাওয়া, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ক্লান্তি, মাথা ঘোরার মতো নানা উপসর্গ দেখা দেয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে মাথা ঘোরা, ভুল বকা, হার্টবিট বেড়ে যাওয়া এবং খিঁচুনির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ভারতের মতো দেশে গরমকাল বেশি সময় ধরে থাকে। আর ভারতীয়দের মধ্যে ডিহাইড্রেশন একটা সাধারণ সমস্যা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখাও গিয়েছে যে, ৭৫ শতাংশ ভারতীয় ডিহাইড্রেশনের সমস্যায় ভুগছেন। প্রান্তিক এলাকায় যেখানে জীবাণুমুক্ত ব্যবহারযোগ্য জলের অভাব, সেখানে যে সব মানুষ বাস করেন, তাঁদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি। তাছাড়া এই ‘সাইলেন্ট ডিহাইড্রেশন’ যে কোনও বয়সের মানুষের জীবনে থাবা বসাতে পারে। যদিও বাচ্চা ও বয়স্কদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি। আবার যাঁরা দীর্ঘক্ষণ গরমে ও রোদের মধ্যে থাকেন, তাঁদের মধ্যেও ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
ডিহাইড্রেশনকে প্রতিরোধ করতে আপনাকে প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে হবে। সাধারণত, বিশেষজ্ঞেরা ৮-১০ গ্লাস জল খাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে, আপনার শরীরে ঠিক কত পরিমাণ তরলের প্রয়োজন রয়েছে, তা নির্ভর করে বয়স, ওজন, উচ্চতা ইত্যাদির উপর। আর যদি কিডনির সমস্যা বা অন্যান্য কোনও শারীরিক অসুস্থতা থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জল পান করুন। শুধু জল ও তরল জাতীয় পানীয় বা খাবার খেলেই চলবে না। তার সঙ্গে মিষ্টিজাতীয় পানীয় এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে যেতে হবে। এতে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি আরও বাড়ে।
ডিহাইড্রেশনের সমস্যা এড়ানোর আরও একটি সহজ উপায় হল এই অবস্থার উপসর্গগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা। যদি হঠাৎ করে তেষ্টা বেড়ে যায়, মুখ শুকিয়ে যায় এবং কোনও ধরনের মাথা ঘোরা বা ক্লান্তি অনুভব করেন, সঙ্গে-সঙ্গে জল খাওয়া শুরু করুন। তার সঙ্গে এমন খাবার বেশি করে খান, যার মধ্যে তরলের পরিমাণ বেশি। এমন ফল, সবজিও আপনাকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। হাইড্রেশনের সঙ্গে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যও বজায় রাখতে হবে। তার জন্য কলা, অ্যাভোকাডো এবং শাকসবজি খেতে পারেন। ডিহাইড্রেশনের উপসর্গ দেখা দিলে, মোটেই অবহেলা করবেন না। কারণ এই অবস্থা কিডনির সমস্যা এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।