
আজকাল, মানুষ সকালে ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে তাদের মোবাইল ফোন হাতে তুলে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং শুরু করেন। ইনস্টাগ্রামে ছবি, ফেসবুকে স্টেটাস এবং হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা এ সব দেখে এবং দিয়ে দিনের শুরু হচ্ছে অনেকের। কয়েক বছর আগেও, সোশ্যাল মিডিয়া ছিল মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের একটি মাধ্যম। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, এমনকি সারা বিশ্বের অপরিচিত ব্যক্তিরাও একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারত। ছবি শেয়ার করা, নতুন ট্রেন্ড জানা এবং জীবনের খুঁটিনাটি অংশ ভাগ করে নেওয়া আগে সহজ ছিল এই মাধ্যমে। কিন্তু এই অভ্যাস যত বাড়তে শুরু করল, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে লাগল।
সোশ্যাল মিডিয়া যত বেশি ব্যবহার করছেন মানুষজন, তাতে মন এবং মেজাজের উপর প্রভাব পড়ছে। এর ফলে মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতিও হচ্ছে। গাজিয়াবাদ জেলা হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের ডক্টর এ কে বিশ্বকর্মা জানিয়েছেন যে, প্রত্যেকেই তাদের জীবনের একটা নির্দিষ্ট সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরে যে, তারা কত ভাল আছে, ব্যয়বহুল ভ্রমণ করছে, দুর্দান্ত জীবনধারার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এগুলো দেখে অনেকেই তাদের জীবনকে অবমূল্যায়ন করতে শুরু করে। এই জিনিসটি মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং কখনও কখনও বিষণ্ণতার দিকে পরিচালিত করে।
আরেকটি বড় সমস্যা হল ডোপামিনের আঘাত। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিটি লাইক এবং কমেন্টের সঙ্গে মস্তিষ্ক অল্প পরিমাণে আনন্দ পায় এবং ধীরে ধীরে এটি একটি আসক্তির মতো হয়ে যায়। পোস্টে কম লাইক পেলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্যাটার্নটি ঠিক একইভাবে কাজ করে যেমন কেউ গেমিংয়ে আসক্ত হয়ে পড়লে।
ঘুমের উপর নেতিবাচক প্রভাব – সোশ্যাল মিডিয়া বেশি ব্যবহার করলে ঘুমের উপর সরাসরি প্রভাব পড়ে। গভীর রাত পর্যন্ত মোবাইলে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং করলে ঠিকমতো ঘুম আসে না এবং মস্তিষ্ক ক্লান্ত থাকে। এই ক্লান্তির ফলে পরের দিন মনোযোগের অভাব, বিরক্তি এবং মানসিক অবসাদ দেখা দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে মানুষ একাকিত্বের শিকারও হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা বিশ্বাস করেন যে, যারা তাদের অনুসরণ করে তারা তাদের সঙ্গে সংযুক্ত। কিন্তু বাস্তব জীবনে তারা কেবল একটি সংখ্যা। আসল সম্পর্ক এবং কথোপকথন হয়ই না।
স্যোশাল মিডিয়ার আসক্তি কাটাতে হলে বাস্তব জগতের মানুষদের সঙ্গে দেখা করতে হবে। NCBI-তে প্রকাশিত পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, যারা সোশ্যাল মিডিয়া কম ব্যবহার করেন তাদের মানসিক চাপ এবং বিষণ্ণতার লক্ষণগুলি তাদের তুলনায় কম থাকে যারা কেবল সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের জীবনযাপন করেন।
চিকিৎসক এ কে বিশ্বকর্মা বলেন যে, “সোশ্যাল মিডিয়া সম্পূর্ণরূপে ছেড়ে দেওয়ার দরকার নেই। তবে এটি ভারসাম্যপূর্ণভাবে ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। সারা দিনে সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় রাখুন, অপ্রয়োজনীয় স্ক্রলিং এড়িয়ে চলুন এবং ঘুমানোর আগে ফোন ব্যবহারের অভ্যাস ত্যাগ করুন। এছাড়াও, আপনার বাস্তব জীবনে সম্পর্কগুলিকে সময় দেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”