মঞ্চে তখন কেকে-ঝড় চলছে। শরীরে অস্বস্তি যে ছিল তার লক্ষণ স্পষ্ট, তবুও মঞ্চ জুড়ে লম্ফঝম্ফ করে দর্শকদের ভরিয়ে দিয়েছেন আনন্দে। মাঝে মধ্যে ব্যাক স্টেজে গিয়ে ঘাম মুছেছেন, জল খেয়েছেন, একটা গানের পর বিশ্রাম নিয়ে আবার পরের গান ধরেছেন। অনুষ্ঠান শেষে অসুস্থ শরীরেই হোটেলে ফিরে যান। অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে এরপর হাসপাতালে নিয়ে গেলেই কেকে -কে মৃত ঘোষণা করা হয়। কেকে-র মৃত্যু নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে, হয়েছে জলঘোলাও। ময়নাতদন্তের পর কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, ‘গায়কের হৃদযন্ত্রে একাধিক ব্লকেজ ছিল। Massive Cardiac Arrest-এর কারণেই মৃত্যু হয় কেকে-র। সম্ভবত বুকে ব্যথার সমস্যাকে তিনি অ্যাসিডিটি ভেবে দিনের পর দিন অ্যান্টাসিড খেয়েছিলেন’। এছাড়াও পুলিশের এক জাতীয় আধিকারিককে কেকে-র স্ত্রীও জানিয়েছেন, ‘শারীরিক অস্বস্তির কারণে প্রায়ই অ্যান্টাসিড খেতেন কেকে। শিল্পীর কাঁধ আর হাতে- যে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে একথাও তিনি বলেছিলেন স্ত্রীকে। এমনকী হোটেলের রুম থেকেও পাওয়া গিয়েছে কয়েক পাতা অ্যান্টাসিড’।
চিকিৎসক আরও জানিয়েছেন,’ দীর্ঘদিন ধরেই হৃদরোগে ভুগছিলেন গায়ক। কিন্তু কোনও রকম চিকিৎসা হয়নি। তাঁর লেফট মেইন করোনারি আর্টারিতে ৮০ শতাংশ ব্লকেজ ছিল। বাকি আর্টারি আর সাবআর্টারিতেও প্রচুর ব্লকেজ ছিল। কিন্তু কোনওটাই ১০০ শতাংশ নয়। সোম-মঙ্গল দু’দিনই তাঁর শো- ছিল। মঞ্চে গান গেয়েছেন, হেঁটেছেন, নেচেছেন। এই সব কিছুই KK-র শরীরে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। যে কারণে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনিয়মিত ছিল তাঁর হার্ট রেটও। এই সব কারণের জন্যই তিনি সংজ্ঞা হারান এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। সঙ্গে সঙ্গে যদি CPR দেওয়া হতো, তাহলেও হয়তো তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হত’।
শারদা হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ শুভেন্দু মোহান্তি বলেছেন, ‘অনেকেই হার্ট অ্যাটাকের সমস্যাকে হজমের সমস্যার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। আর তাই পার্থক্য করার জন্য আমরা সাধারণত বয়স, পারিবারিক ইতিহাস, রক্তচাপ, ধূমপানের ইতিহাস-এই সব ঝুঁকির দিকগুলো দেখি। যদি কারোর এই সমস্যা থাকে এবং ক্রমাগত হজমের অসুবিধে হচ্ছে বলে মনে হয় তবে তা কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ। বিশেষ করে বয়স যদি ৪০-এর মধ্যে হয়’।
বেঙ্গালুরুর ফোর্টিস হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ এ গোপী বলেন, অ্যাসিডিটি নাকি হার্টের সমস্যা তা বুঝতে প্রাথমিক কিছু পরীক্ষা করতে দেওয়া হয় রোগীকে। যাঁরা ধূমপান করেন, ডায়াবেটিস রয়েছে তাঁদের মধ্যে হৃদরোগের সম্ভাবনাব সবচাইতে বেশি। তাই এঁদের যদি বুকে ব্যথা বা অ্যাসিডিটির সমস্যা হয় তাহলে তা উড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়। বুকে জ্বালা, পেটে ব্যথা, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট- এই সব উপসর্গই কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনার কথা জানান দেয়। আর তাই যদি এই সমস্যা ক্রমাগত হতে থাকে তাহলে একটা ইসিজি অবশ্যই করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে, ইসিজি হার্ট অ্যাটাকের পূর্বাভাস দিতে পারে, যা জীবন বাঁচায়।
ডাঃ এ গোপী আরও জানান, ‘যদি এই সব লক্ষণ না থাকে এবং শুধুই বুকে জ্বালা অস্বস্তি থাকে তাহলে একটা অ্যান্টাসিড খেয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই পারেন। কিন্তু এক ঘন্টা পর যদি সমস্যা না কমে তাহলে অপেক্ষা না করে চিকিৎসকের কাছে যান। দিনের পর দিন অ্যান্টাসিড খাবেন না। সঙ্গে একটা ইসিজি অন্তত করান। অ্যান্টাসিড খেয়ে ৪৫ মিনিটের বেশি কিছুতেই অপেক্ষা করবেন না’।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।