
আজকের দিনে বহু মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সামনে বসে কাজ করেন। অফিস, অনলাইন ক্লাস, ফ্রিল্যান্স কাজ কিংবা গেমিং—সব ক্ষেত্রেই ঘাড় নিচু করে দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার অভ্যাস তৈরি হয়েছে। এর ফলেই দেখা দিচ্ছে একটি সাধারণ কিন্তু কষ্টদায়ক সমস্যা—ঘাড়ে ব্যথা বা ‘টেক্সট নেক সিনড্রোম’।
ঘাড়ে ব্যথা শুধু অস্বস্তির কারণই নয়, বরং মাথাব্যথা, কাঁধে টান, পিঠে জট এবং ঘুমের সমস্যা তৈরি করতেও পারে। তবে কয়েকটি সহজ অভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ঘাড়ে ব্যথার কারণ:
১। মনিটরের উচ্চতা ঠিক না হওয়া
২। অনেকক্ষণ মাথা নিচু করে কাজ করা
৩। কাঁধ ঝুলিয়ে বসা বা ভুল অঙ্গবিন্যাস
৪। বিরতিহীনভাবে কয়েক ঘণ্টা কাজ করা
৫। পর্যাপ্ত ব্যায়াম বা স্ট্রেচিং না করা
কীভাবে মিলবে মুক্তি:
১. সঠিক অঙ্গবিন্যাস বজায় রাখুন
চেয়ার ও টেবিল এমন উচ্চতায় রাখুন যাতে আপনার স্ক্রিনটি চোখের সমান্তরালে থাকে। ঘাড় নিচু না করে সোজা করে বসুন, এবং পিঠ সাপোর্ট দেয় এমন চেয়ার ব্যবহার করুন।
২. প্রতি ৩০–৪৫ মিনিট অন্তর বিরতি নিন
একটানা না বসে প্রতি আধ ঘণ্টায় ২–৩ মিনিটের জন্য উঠে দাঁড়ান, হালকা হাঁটাহাঁটি করুন বা ঘাড়-ঘাড়ি স্ট্রেচ করুন।
৩. ঘাড়ের ব্যায়াম করুন
প্রতিদিন ৫–১০ মিনিট ঘাড়ের হালকা ব্যায়াম করুন:
মাথা ধীরে ধীরে ডান-বাঁ দিকে ঘোরানো
মাথা উপর-নিচে ঝোঁকানো
কাঁধ ঘোরানো ও উঁচু-নিচু করা
এসব স্ট্রেচিং রক্তসঞ্চালন বাড়ায় ও ব্যথা কমায়।
৪. গরম সেঁক (Hot Compress)
ঘাড়ে ব্যথা হলে হালকা গরম জলের ব্যাগ দিয়ে সেঁক দিলে পেশি শিথিল হয় ও আরাম পাওয়া যায়।
৫. স্ক্রিন টাইম কমান
কাজ ছাড়া অপ্রয়োজনে ফোন বা কম্পিউটার ব্যবহার কমিয়ে দিন। ঘুমানোর আগে ফোন ব্যবহার একেবারে এড়িয়ে চলুন।
৬. পর্যাপ্ত জল ও ঘুম
শরীর হাইড্রেটেড রাখলে পেশি নমনীয় থাকে এবং ব্যথা কম হয়। রাতে ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমও অত্যন্ত জরুরি।
যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়
তাহলে অবশ্যই একজন অর্থোপেডিক বা ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। উপযুক্ত থেরাপি বা চিকিৎসায় ব্যথা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আসে।
কম্পিউটারে কাজ এখন জীবনের অঙ্গ, কিন্তু সেই সঙ্গে শরীরের যত্নও জরুরি। সঠিক ভঙ্গি, নিয়মিত স্ট্রেচিং ও বিশ্রামই ঘাড়ে ব্যথা থেকে মুক্তির মূল চাবিকাঠি। যত্ন নিন, সতর্ক থাকুন।