করোনা আবহে ‘সুপার ইমিউনিটি’ বাড়াতে চাহিদা তুঙ্গে ‘কালো মাসি’র!
কালো জগতের আলো। কথাতেই আছে। একদম খাঁটি কথা। কালো রং নিয়ে যে যতই দূর ছাই করুক না কেন, গোটা দুনিয়া কালো জিনিসের কদর বেশি। মূল্যও নজরকাড়া।
কালো পাথর, কালো মুক্তো, ব্ল্যাক পান্থারের তীব্র জ্যোতি, সৌন্দর্য আর নজরকাড়া গতি দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যাবে নিঃসন্দেহে। তবে হয়তো অধিকাংশই জানেন না যে কালো রঙের মুরগিও পাওয়া যায়। পালক, ঠোঁট, পা. নখ, ঝুটি, চোখ, এমনকি ভিতরের মাংসের রঙও কুচকুচে কালো। এই বিরল মুরগির মাংসই নয়, হাড়, ভিতরের নাড়িভুড়ি ও ডিমের রঙও হালকা কালো রঙের। তবে ভারতে এই মুরগির ডিম হালকা সোনালির রঙের হয়ে থাকে। মানে কতটা সোনার ডিমের মতোই।
করোনা আবহে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য চিকিত্সক বিজ্ঞানীরা বার বার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর ও প্রোটিন-জাত খাবার বেশি খেতে। কালো মুরগির মাংস কালো বলে অনেকে পচা ভেবে এড়িয়ে যান। কিন্তু এই বিরল প্রজাতির মুরগির উপতারিতার কথা সব গবেষকরাই এককথায় মেনে নিয়েছেন। কালো মুরগি বা কড়কনাথ মুরগিতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন ও অন্যান্য খাদ্যগুণ। রয়েছে ঐষধি গুণসম্পন্নও।
কড়কনাথ নামটি এল কীভাবে?
আমেরিকার ফ্লোরিডায় এই কালো রঙের মুরগির ব্যবসা করে কোটিপতি হয়ে গিয়েছিলেন জনৈক মুরগি ব্যবসায়ী। তবে ইন্দোনেশিয়ার জাবা দ্বীপের কেমানি এলাকায় প্রথম পাওয়া যায়। একে অ্যায়াম কেমানি চিকেন বলা হয়। ভারতেও এই কালো মুরগির পাওয়া যায়। মধ্যপ্রদেশের ঝাউবা, আলিরাজপুর, বারওয়ানি ও ধর জেলায় এই মুরগি চাষের প্রচলন রয়েছে। মধ্য়প্রদেশের আদিবাসীরা ইন্দোনেশিয়া থেকে মুরগি নিয়ে এসে হাইব্রিড প্রজাতির মুরগি সৃষ্টি করে। তারপর থেকেই দেশে কালো মুরগির চাষ শুরু হয়। এই হাইব্রিড কালো মুরগিকেই দেশীয় ভাষায় কড়কনাথ মুরগি বলা হয়। মধ্যপ্রদেশে আবার একে কালো মাসিও বলে।
মধ্যপ্রদেশ প্রথম চাষ শুরু হলেও এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই এই মুরগি পাওয়া যায়। কর্ণাটক, কেরল, তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গেও বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের কাকদ্বীপ, নামখানা ও কুলপিতে এই মুরগির চাষ শুরু হয়েছে।
দাম কত?
সাধারণ মুরগি যে এটি নয়, তা তো বলাই বাহুল্য। এই মুরগির মাংসের দাম কত হবে, কোনও আইডিয়া আছে? কড়কনাথ মুরগির মাংসের দাম বর্তমানে প্রায় ২০০০- ৩০০০ টাকা। কোভিড পরিস্থিতিতে এই মাংসের চাহিদা বেশি থাকায় স্বাভাবিকভাবেই দাম ৫ হাজারের কাছাকাছি। তবে দরাদরি করলে হয়তো ১০০০টাকাতেও মিলতে পারে। কড়কনাথের একটি ডিমের দাম ৫০ টাকা।
এই মুরগির এত চাদিহা হঠাত করে বেড়ে গেল কেন?
– গবেষণায় প্রমাণিত যে, অন্যান্য মুরগির তুলনায় এই প্রজাতির মুরগির পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। আরও আশ্চর্যের যে এই মুরগিতে কোনও ফ্যাট থাকে না। রয়েছে আয়রন, প্রোটিন, ভিটামিন বি১, সি, ই, বি১২, নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস। এই চিকেনে কোলেস্টেরলও নেই।
– কড়কনাথে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। তাই প্রয়োজনীয় ভিটামিন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কোভিড পরিস্থিতিতে এই কড়কনাথের মাংস বিক্রির ব্যাপারে উঠেপড়ে লেগেছে কেন্দ্রও।
– এই সুস্বাদু মাংসে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকার কারণে হার্টের জন্য বেশ ভাল। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, খণিজ উপাদান থাকার কারণে রক্ত জমাট বাধার ঝুঁকি থাকে না। হার্ট সুস্থ রাখার জন্য কালো মাংসের কদর বাড়িয়ে ডায়েটে আনুন বদল।
– এই প্রজাতির মুরগির মাংসে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় দেহের মধ্যে ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা যেমন গড় তোলে তেমনি ক্যানসারের কোষের বিরুদ্ধেও লড়াই করতে সাহায্য করে।
– গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও প্রোটিনে ভরপুর থাকায় শরীরে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ডায়েটে এই ধরণের মাংসের পদ রাখলে আপনার শরীরের নানান সমস্যার সমাধান হয়ে উঠতে পারে এক নিমেষে।
– চোখের দৃষ্টি বাড়াতেও এই মাংসের জুড়ি মেলা ভার। এই ধরণের মাংসে কারনোজিন নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
– ঋতুস্রাবের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে, ত্বকের নানান সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে, মাথাব্যাথা ও অ্যাজমার রোগ সারাতে সহায়তা করে, রক্তাল্পতার ঝুঁকি কমায়, মহিলাদের ক্ষেত্রে অস্টিওপোরোসিস ও অস্টিআর্থ্রাইটিস রোগ প্রতিরোধেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে এই কালো মাসি!