কোভিড১৯ অতিমারি (COVID 19 Pandemic) চলাকালীন প্রেসক্রিপশনে Dolo-650 দেওয়া নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হওয়ায় নয়া গবেষণায় দেখা গিয়েছে ভারতীয়দের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের (Antibiotic) অত্যাধিক ব্যবহার বেড়ে গিয়েছে। আর এতেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গবেষক থেকে চিকিত্সকবিজ্ঞানীরা। গবেষকদের মতে, ২০১৯ সাল থেকে নানা তথ্য সমগ্রহ করে জানা গিয়েছে, প্রায় ৫০০ কোটিরও বেশি অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেছে এই দেশের মানুষ। যার মধ্যে অ্যাজিথ্রোমাইসিন সবচেয়ে বেশি খাওয়া অ্যান্টিবায়োটিক, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। নয়া তথ্য প্রকাশে বেশ চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে, তা বলাই বাহুল্য। গবেষণার লক্ষ্য ছিল, অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রয় ও ব্যবহার নিরীক্ষণ করা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়া নিয়মের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা তা প্রতিষ্ঠা করে ও নিয়মগুলিকে আরও শক্তিশালী হিসেবে গঠন করা।
ল্যানসেট আঞ্চলিক স্বাস্থ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার (Lancet Regional Health Southeast Asia) জার্নালে প্রকাশিক একটি সমীক্ষায় বলেছে, সর্বোচ্চ অ্যান্টিবায়োটিকের অনুপযুক্ত ব্যবহার করা হয়েছে খোদ ভারতেই। তার মধ্যে অর্ধেক ওষুধের কোনও অনুমোদন নেই। গবেষণায় শনাক্ত করে বলা হয়েছে যে বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিকের কাউন্টারে অনিয়ন্ত্রিত বিক্রি ওষুধের প্রাপ্যতা ও বিক্রয়কে আরও জটিল করে তুলেছে। ভারতে সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহীতা রয়েছে, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে পাওযা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল স্টুয়ার্ডশিপ প্রোগ্রামের অনুরূপ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের নজরদারি রয়েছে। সেখানে ভারতে সেই ব্যবস্থার কোনও চল নেই। গবেষকরা গবেষণাপত্রে আরও জানিয়েছেন, ৬৫টি দেশের সর্বশেষ বিশ্বব্যাপী নজরদারি প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে। যেখানে ২০১৫ সালের কোন কোন দেশ অ্য়ান্টিবায়োটিক সেবন করেছে, সেই তালিকায় আবার ভারতের কোনও তথ্য নেই।
অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির জন্য নয়া বিধানের প্রয়োজন যে রয়েছে তা এই তথ্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নত করার নামে বেনিয়মের ফাঁকফোঁকরই যে সবচেয়ে বেশি, তার প্রমাণ এবার হাতেনাতে প্রমাণিত হতে চলেছে। অ্যান্টিবায়োটিকের সেবনকারীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা ও বিক্রির জন্য বিদ্যমান নিয়মগুলি আরও শক্তিশালী করে তোলার প্রয়োজন হয়েছে।
মার্কিন দেশের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর মতে, অ্যান্টিবায়োটিক হল এমন এক ওষুধ যা মানুষ-সহ অন্যান্য প্রাণীর ব্য়াকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে ওই ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে বা তার বৃদ্ধি বা সংখ্যাবৃদ্ধি প্রতিরোধ করে তোলে। এপিডেমিওলজি বিভাগের গবেষকরা, বোস্টন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ পাবলিক হেলথ, এবং ইন্ডিয়ার পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন ফার্মাট্র্যাক থেকে ডেটা বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, একটি বেসরকারি খাতের ওষুধ বিক্রয় ডেটাসেট সারা দেশে ৯ হাজার স্টকিস্টের একটি প্যানেল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সেখানে দৈনিক ডোজগুলির মোট সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০৭১ মিলিয়ন। মানে প্রতি ১০০০জন প্রতি ১০.৪ ওই ট্যাবলেট দৈনিক ডোজ হিসেবে গ্রহণ করেছে। এদিকে Azithromycin-500 সবচেয়ে বেশি খাওয়া অ্যান্টিবায়োটিকগুলির মধ্যে অন্যতম। বলা যেতে পারে এটাই সর্বাধিক। তারপরে cefixime 200 mg ট্যাবলেট।
গবেষকরা গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন, আমরা দেখতে পেয়েছি যে তুলনামূলকভাবে কম সামগ্রিক হারে ব্যবহারের সমস্যা নির্দেশ করে। ভারতে ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এত বেশি যে সেই অনুপাতে জনস্বাস্থ্যের উপর সেটাই পরবর্তীকালে চাপ সৃষ্টি করবে। আর সেটাই এখন উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।