
শেষ কয়েক বছরে দেশজুড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে অসংক্রামক (Non-Communicable Diseases)কিছু রোগ এবং ব্রেন স্ট্রোক। উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্তের হার। ইদানিং কালে ভারতে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হল এই ব্রেন স্ট্রোক। ব্রেন স্ট্রোকে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অসাড় হয়ে যাওয়া এবং মৃত্যুর সংখ্যা গত কয়েক বছরে দাঁড়িয়েছে ৭ লক্ষ-তে। ২০০০ সাল থেকে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এই ব্রেন স্ট্রোকের ঘটনা। আক্রান্তদের বয়স ৩০-৪০ এর মধ্যেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী ৬০ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই ব্রেন স্ট্রোকে।
ব্রেন স্ট্রোক কী?
মস্তিষ্কের কোনও অংশে হঠাৎ করে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ব্রেন স্ট্রোকের মত ঘটনা ঘটে। মস্তিষ্কের কোষে তখন অক্সিজেন কম পরিমাণে পৌঁছয়। মস্তিষ্কে অক্সিজেন কম গেলেই দ্রুত কোষের মৃত্যু হয়। কোষের মৃত্যু হলেই তখন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাদের কর্মক্ষমতা হারায়। এমনকী হতে পারে মৃত্যুও। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অঞ্চলে হারিয়ে যায় নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাও।
তার তাই ব্রেন স্ট্রোকে ক্ষতি অড়াতে যথা সময়ে চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ হল শনাক্তকরণও। আর তাই স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রথম এই সাড়ে চার ঘন্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা হয় গোল্ডেন পিরিয়ড। এই সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে রোগীর সেরে ওঠার এবং সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। সেই সঙ্গে খুব ভাল চিকিৎসার সুযোগও পাওয়া যায়। আর তাই যে সব বিষয় অবশ্যই নজরে রাখবেন-
*ভারসাম্য হারানো
*এক বা দুই চোখেই দৃষ্টিশক্তি হারানো
*মুখের একপাশ ঝুলে যাওয়া
*একটি হাত অসাড় হয়ে যাওয়া
*কথা জড়িয়ে যাওয়া
এই সব লক্ষণ থাকলে দ্রুত সতর্ক হন এবং সঙ্গে সঙ্গেই নিয়ে যান কাছের কোনও হাসপাতালে। ভারতীয়দের মধ্যে এই সচেতনতা বাড়িয়ে তোলা খুবই জরুরি। হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের মত সমস্যা থাকলে প্রথম থেকেই স্ট্রোক সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সম্প্রতি Boehringer Ingelheim India-তরপে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য বিশেষত মেট্রো শহরগুলিতে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। আর সেখানেই দেখা গিয়েছে ৭০ শতাংশ মানুষ স্ট্রোক শব্দটি জানেন আর ২০ শতাংশ মানুষ স্ট্রোকের রোগ-লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন। সমীক্ষার ফলাফলে স্পষ্ট যে এই সচেতনতা আরও বহুগুণ বাড়িয়ে তুলতে হবে। সচেতনতার অভাবেই কিন্তু ব্রেন স্ট্রোকে এত বেশি মৃত্যুহার। স্ট্রোকের লক্ষণ এবং বিষয় সম্বন্ধে মানুষ যত বেশি জানবেন ততই জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। একমাত্র মানুষ সচেতন হলেই আটকানো যাবে ব্রেন স্ট্রোকের হার।
ব্রেন স্ট্রোকের কারণ কী?
ডাঃ রত্না দেবী, দক্ষিণা হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন-এর CEO জানিয়েছেন, লাইফস্টাইল ডিজিজ হল এই ব্রেন স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। বছরের পর বছর ধরে শরীরের কোনও রকম যত্ন না নিলে, অবহেলা করলে এবং যে কোনও উপসর্গ দেখলে গ্রাহ্য না করলেই সেখান থেকে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা থাকে ব্রেন স্ট্রোকের। জীবনযাত্রা যদি নিয়ন্ত্রিত হয়, নিয়ম মেনে ঘুম-খাওয়া চলতে থাকে তাহলে শরীর সুস্থ থাকে। সেই সঙ্গে স্ট্রোকের ঝুঁকিও অনেকটাই কমে যায়। এছাড়াও আরও যা কিছু অবশ্যই মেনে চলতে হবে-
তামাক, অ্যালকোহল থেকে একেবারেই দূরে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে নুন সমৃদ্ধ খাবার, চিনি যথা সম্ভব কম খেতে হবে। নিয়মিত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতেই হবে। মানসিক চাপ কমাতেই হবে। এর পাশাপাশি জীবনের প্রতি স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গিও থাকা প্রয়োজন। এছাড়াও স্ট্রোক থেকে সুস্থ হয়ে উঠলেও নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতে হবে। জরুরি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। সেই সঙ্গে ধৈর্য ধরতে হবে। অতিরিক্ত উত্তোজনা চলবে না। শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিশ্রমও চলবে না। ধীরে ধীরে কী ভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে তাই-ই করুন।