
হাঁপানি শ্বাসযন্ত্রের এক দীর্ঘস্থায়ী রোগ। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ আজ এই রোগে আক্রান্ত। শ্বাসনালী ফুলে ওঠা, সংকুচিত হয়ে যাওয়ার মতো নানা সমস্যা দেখা যায়। যার ফলে রোগীদের শ্বাস নিতেও অত্যন্ত কষ্ট হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) তাদের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে জানিয়েছে বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৩৫ মিলিয়ন ব্যক্তি হাঁপানিতে আক্রান্ত। এই উদ্বেগজনক পরিসংখ্যানের পরিপ্রেক্ষিতে, প্রতি বছর মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার, এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে পালিত হয় বিশ্ব হাঁপানি দিবস বা ওয়ার্ল্ড অ্যাস্থেমা ডে। আসুন এই রোগ সঙ্গে আরেকটু সম্যক পরিচিতি গড়ে তুলি। কেন হয় হাঁপানি, কী ভাবে এর সঙ্গে লড়বেন? রইল বিস্তারিত।
হাঁপানির কারণ –
হাঁপানি শুধুমাত্র কোনও একটি কারণে হয় না। এটি এক প্রকার বহুমুখী রোগ। যা জিন এবং পরিবেশ উভয় দ্বারা প্রভাবিত হয়। যাদের পরিবারে হাঁপানির ইতিহাস রয়েছে তাদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিঊমিত অতিরক্ত ধূমপান, বায়ু দূষণ, ধূলিকণা ভেতরে যাওয়া, পরাগরেণুর মতো জ্বালাময়ী এবং অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার কারণে হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে শহরগুলিতে হাঁপানির ক্ষেত্রে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।
হাঁপানির লক্ষণ –
যখন তখন শ্বাসকষ্ট হওয়া, রাতে বা সকালে অস্বাভাবিক কাশি হওয়া, বুকে শক্ত হয়ে আসার মতো সমস্যা দেখা দিলে সাবধান হওয়া প্রয়োজন।
হাঁপানির চিকিৎসা –
যদিও হাঁপানি সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায় না। তবে কার্যকর চিকিৎসা পরিকল্পনা ব্যবহার করে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। হাঁপানির চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হল এর লক্ষণগুলি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা, ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা এবং হাঁপানির আক্রমণের সম্ভাবনা হ্রাস করা।
কী কী পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়?
ইনহেলার – হাঁপানির সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা হল ইনহেলার। যা সরাসরি ফুসফুসে কাজ করে। দুই ধরনের ইনহেলার রয়েছে। হাঁপানির আক্রমণের সময় তাৎক্ষণিক উপশমের জন্য একটি রেসকিউ ইনহেলার। হাঁপানির ওষুধ চললে, তার জন্য একটি কন্ট্রোলার ইনহেলার। আপনার কোনটি প্রয়োজন তা চিকিৎসকের থেকে পরামর্শ নিয়ে নিন।
ওষুধ – ইনহেলার ছাড়াও, হাঁপানির রোগীদের প্রদাহ কমাতে এবং শ্বাসনালী প্রশস্ত করার জন্য মুখে খাওয়ার ওষুধও দেওয়া যেতে পারে।
অ্যালার্জেন ইমিউনোথেরাপি – এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ধীরে ধীরে অ্যালার্জেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। যাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অসংবেদনশীল হয়।
ট্রিগার – হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যতটা সম্ভব তাদের ট্রিগারগুলি চিনতে হবে এবং সেগুলি এড়িয়ে চলতে হবে। এটি তামাকের ধোঁয়া, ধুলোর মাইট বা অন্যান্য স্বীকৃত অ্যালার্জেন সহ অনান্য জিনিস হতে পারে।
জীবনধারা পরিবর্তন – একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, সঠিক ব্যায়াম এবং একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস হাঁপানির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার রাস্তা।
বিঃদ্রঃ – মনে রাখবেন সবার শরীরের গঠন একরকম নয়। তাই কোনও রকম সমস্যা হলে সরাসরি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজে কোনও রকম ওষুধ খাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।