
ফ্যারেনজাইটিস (Pharyngitis) হল গলার পিছনের অংশে (ফ্যারিংস) প্রদাহ বা সংক্রমণ। সাধারণভাবে একে অনেকেই গলা বসা বা গলায় ইনফেকশন বলে থাকেন। শিশু ও বড়দের উভয়ের মধ্যেই হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি ঋতু পরিবর্তন, সর্দি-কাশি বা সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে।
ফ্যারেনজাইটিস কেন হয়?
১. ভাইরাস সংক্রমণ – প্রায় ৭০% ক্ষেত্রে ফ্যারেনজাইটিস ভাইরাস দ্বারা হয়। যেমন সাধারণ সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, অ্যাডেনোভাইরাস ইত্যাদি।
২. ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ – বিশেষ করে স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া এর জন্য দায়ী। একে Strep throat বলা হয়।
৩. অ্যালার্জি ও দূষণ – ধুলো, ধোঁয়া, ধূমপান বা অ্যালার্জির কারণেও গলায় প্রদাহ হতে পারে।
৪. অতিরিক্ত ঠান্ডা-গরম খাবার – খুব ঠান্ডা পানীয়, আইসক্রিম বা গরম খাবার খাওয়ার পর হঠাৎ গলার প্রদাহ দেখা দিতে পারে।
৫. অতিরিক্ত গলার ব্যবহার – জোরে বা অনেকক্ষণ কথা বলা, গান গাওয়া বা চিৎকার করার কারণে গলায় চাপ পড়ে এবং ফ্যারেনজাইটিস হতে পারে।
কখন বুঝবেন ফ্যারেনজাইটিস হয়েছে?
গলা ব্যথা বা চুলকানো। গিলতে কষ্ট হওয়া। গলা শুষ্ক লাগা। কাশি ও সর্দি হওয়া। গলার স্বর ভেঙে যাওয়া বা বসে যাওয়া। গলায় ফোলা অনুভূত হওয়া। জ্বর, মাথাব্যথা ও শরীরে দুর্বলতা (বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ক্ষেত্রে)।
কী করবেন?
১. বাড়িতে করণীয়
গরম লবণ জল দিয়ে দিনে কয়েকবার গার্গল করুন। হালকা গরম জল বেশি পান করুন। গরম স্যুপ, হারবাল টি বা মধু-লেবুর কুসুম গরম জল খেলে গলা আরাম পায়। বেশি জোরে কথা বলা বা চিৎকার করা থেকে বিরত থাকুন। ঘরের বাতাস আর্দ্র রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা ভালো।
২. চিকিৎসা
যদি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক নিতে হতে পারে। ভাইরাসজনিত হলে অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার নেই; বিশ্রাম, পর্যাপ্ত জল ও গার্গলেই অনেক সময় সেরে যায়। প্রয়োজনে ব্যথা কমানোর ওষুধ বা লজেন্স নেওয়া যেতে পারে।
সতর্ক থাকবেন কীভাবে?
অপরিষ্কার হাত মুখে দেবেন না, নিয়মিত হাত ধুয়ে নিন। ঠান্ডা পানীয়, বরফ বা অতিরিক্ত ঝাল খাবার এড়িয়ে চলুন। ধূমপান ও ধোঁয়ার পরিবেশ থেকে দূরে থাকুন। সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহার করা তোয়ালে, গ্লাস, বাসন ইত্যাদি ব্যবহার করবেন না। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খান। দীর্ঘদিন গলা ব্যথা থাকলে বা জ্বর না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।