সিঁদুরে মেঘ আগেই দেখেছিলেন চিকিৎসকেরা। এবার সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। শুধু কলকাতা নয়, সামগ্রিকভাবে রাজ্যজুড়েই এবার ভাঙতে চলেছে ডেঙ্গির যাবতীয় পুরনো রেকর্ড—আরও স্পষ্ট করে বললে গত এক দশকের রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে এবারের ডেঙ্গি। উত্তর ২৪ পরগণা, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা তো ছিলই। এবার হু-হু করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে মুর্শিদাবাদ, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি জুড়েও। আর এই সংখ্যা যে দ্রুততার সঙ্গে বাড়ছে, তাতে চিকিৎসকদের আশঙ্কা খুব শীঘ্রই পাঁচ বছরের রেকর্ড ভাঙবে এবারের ডেঙ্গি। সেই সূত্রেই আশঙ্কা: গত এক দশকের রেকর্ডও ভেঙে দেবে এবারের ডেঙ্গি সংক্রমণ। ২০১৭ আর ২০১৯ সালে রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সবথেকে বেশি। সেই ২ বছরে রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩৭,৭৪৬ জন এবং ২৮, ০৭০ জন। ২০২২-এ অর্থাৎ এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২৪, ৭৪৬ জন। ৯ অক্টোবর, রবিবার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন নতুন করে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯২ জন। হাসপাতালে ভর্তি ৬৯৫। এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গিতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে উত্তর ২৪ পরগণা থেকে। ১ জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ওই একটি জেলাতেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬৪৮ জন।
আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা, বৃষ্টির দাপটের জেরে এই সংখ্যা যে আরও বাড়বে, তা-ও স্পষ্ট করেছেন চিকিৎসকেরা। শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতালেই এই মুহূর্তে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন ৮০৬ জন। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী যেমন জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে কলকাতার যা আবহাওয়া, তাতে নভেম্বর মাস পর্যন্ত থাকবে ডেঙ্গির দাপট। ওই সময় পর্যন্ত যাবতীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। সেই সঙ্গে মানুষকেও সচেতন হওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। একই সঙ্গে সচেতন হতে হবে পুজো কমিটি এবং ক্লাবগুলিকেও।
পরিসংখ্যান বলছে এই বছর ৩৮ তম সপ্তাহে কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৬৭। এক সপ্তাহের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২১-এ। এর প্রধান কারণ এডিস মশার বৃদ্ধি। এখনও কলকাতাতে বৃষ্টি হয়ে চলেছে। তা যে পর্যাপ্ত পরিমাণে হচ্ছে এরকমটাও নয়। পরিমাণে কম হওয়ার কারণেই জল জমে থেকে যাচ্ছে। আর এই জলেই বংশবিস্তার করে চলেছে এডিস মশা। ভারী বৃষ্টি না হলে এই মশার লার্ভা নষ্টও হবে না। এছাড়াও সাধারণ তাপমাত্রা যতক্ষণ না ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এডিস মশাকে দূর করাও খুব সমস্যার। পুজো প্যান্ডেলের কারণে যে সব গর্ত তৈরি হয়েছে, সেখানে জল জমে বাড়তে পারে এডিস মশা—এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞরা আগেই করেছিলেন। কালীপুজোর প্যান্ডেলের কারণেও বাড়তে পারে ডেঙ্গির সংখ্যা, এই সাবধানবাণীও দিয়ে রেখেছেন তাঁরা।
ডেঙ্গি পরিস্থিতি যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, তা নিয়ে কলকাতা পুরসভাকে শনিবারই সতর্ক করেছে স্বাস্থ্যদফতর। কোথাও যাতে জল না জমে, সে বিষয়ে যেমন নজরদারি চালাতে হবে তেমনই টেস্টের সংখ্যাও বাড়াতে হবে। জমা জলের বিষয়ে আরও বেশি কঠোর হতে হবে পুজো কমিটিকেও।