
মহিলাদের একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া হল, মেনোপজ় বা ঋতুবন্ধ। সাধারণত, বয়স ৫০ বছরের কোঠায় পৌঁছলেই মেনোপজ় হয়। অনেকের আবার বয়স ৪০ বছর পেরোলেই মেনোপজ় হয়। নির্দিষ্ট সময়ের আগে মেনোপজ় হলে শারীরিক ও মানসিক নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। অর্থাৎ মন ও মস্তিষ্কের উপরেও প্রভাব ফেলে মেনোপজ়।
মেনোপজ় এবং তার ফলে শারীরিক, মানসিক নানা পরিবর্তনের জন্য মূলত দায়ী ইস্ট্রোজেন হরমোন। এই হরমোনই সন্তান উৎপাদনের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে। ৪৫-৫০ বয়সের পর ইস্ট্রোজেন হরমোন উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে মাসিক ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যায় অর্থাৎ মেনোপজ় হয়। আর ইস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শরীরে অন্যান্য হরমোনের ভারসাম্যও কিছুটা বিঘ্নিত হয়। যার প্রভাব শরীর থেকে স্নায়ু ও মস্তিষ্কের উপর পড়ে। মেনোপজ়ের আগে থেকেই শরীর ও মানসিক অবস্থার কিছু বদল ঘটে, যাকে প্রি-মেনোপজ় উপসর্গ বলে।
প্রি-মেনোপজ় ও মেনোপজ়ের লক্ষণ চিনে নিন
মুড বদল:
মেনোপজ়ের সময় অনেক মহিলার ঘন-ঘন মুড বদল, অস্থিরতা দেখা দেয়। এই সময়ে অধিকাংশ মহিলা সামান্য কারণেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, উত্তেজনা দেখা দেয়। এই সময়ে অনেকেই একাকিত্বে ভোগেন, হতাশা গ্রাস করে।
ঘুম ব্যাহত হওয়া:
মেনোপজ়ের সময় অনেক মহিলার ঘুম ঠিকমতো হয় না। বিছানায় দীর্ঘক্ষণ শুয়ে থাকলেও সহজে আসে না। অনেকের আবার কোনও কারণ ছাড়াই বারবার ঘুম ভেঙে যায়। অর্থাৎ টানা ভাল ঘুম হয় না।
গরম অনুভূতি:
হঠাৎ করে গরম অনুভূব হচ্ছে, পাখা-এসি চালানোর পরেও রাতে ঘেমে যাচ্ছেন–৪৫ বছরের পর এরকমটা হলে বুঝবেন মেনোপজ়ের সময় আসতে চলেছে। ডাক্তারি ভাষায় এই অবস্থাকে ভ্যাসোমোর উপসর্গ বলে। হঠাৎ করে গরম অনুভূতি, ঘুমনোর সময় ঘেমে যাওয়া, রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া মেনোপজ়ের প্রাথমিক লক্ষণ।
হাড়ের স্বাস্থ্য:
মেনোপজ়ের প্রভাব হাড়ের স্বাস্থ্যের উপরেও পড়ে। এই সময় দেহের হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে এই সময়ে অল্প আঘাতেই হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, যা পরোক্ষে স্নায়ুর কার্জকর্মের উপরেও প্রভাব ফেলে।
স্নায়বিক সমস্যা:
ইস্ট্রোজেন হরমোন মস্তিষ্কের বিকাশ ও কাজকর্মের সঙ্গে সংযুক্ত। এই হরমোনের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে তার প্রভাব মস্তিষ্ক থেকে স্নায়বিক কাজকর্মের উপর পড়ে। তাই মেনোপজ়ের পর অনেকের স্নায়বিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। যার ফলে বিভিন্ন স্নায়ুঘটিত রোগ, এমনকি অ্যালঝাইমার্সের ঝুঁকি বাড়ে।
তাই মেনোপজ়ের সময় বন্ধু, আত্মীয় ও প্রিয়জনদের পাশে থাকা জরুরি। বন্ধু, প্রিয়জনের ভালবাসা, সহযোগিতা ও সমর্থন পেলে অনেক সময়ই মানসিক অস্থিরতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়। তারপরও সমস্যা হলে কাউন্সেলিং করানোর পরামর্শ দেন স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞরা।