
ডিসলিপিডেমিয়া— এই নামটা হয়তো অনেকের কাছেই অপরিচিত। কিন্তু শুনলে অবাক হবেন প্রতি বছর এই রোগের কারণেই সারা বিশ্বে মৃত্যু হয় লক্ষ লক্ষ মানুষের। তাই সম্মক ধারণা না থাকলেও এই বিষয়ে জানাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কী এই রোগ? এক বাক্যে বোঝাতে বলতে হয়, কোলেস্টেরলের মাত্রা জনিত এক সমস্যা। যার ফলে রক্তে বেড়ে যায় অস্বাভাবিক পরিমাণ লিপিড। যা মানুষকে ঠেলে দেয় হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা ধমনী শক্ত হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যার দিকে।
কেন এত বিপজ্জনক ডিসলিপিডেমিয়া?
ডিসলিপিডেমিয়া রোগের সবচেয়ে ভয়ানক দিক হল এই রোগ আপনার শরীরে জাল বিস্তার করে অত্যন্ত ধীর গতিতে। প্রায় নীরবে। প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত স্পষ্ট কোনও উপসর্গও দেখা যায় না। তাছাড়া সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় যে শক্ত হয়ে যাচ্ছে তাঁর ধমনি। যতক্ষণ না হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো বড় কোনও ঘটনা ঘটে এই রোগ চট করে ধরাও পড়ে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, উচ্চ কোলেস্টেরল প্রতি বছর গোটা বিশ্বে প্রায় ২৬ লক্ষ মানুষের মৃত্যু এবং ২.৯৭ কোটি মানুষকে দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার দিকে ঠেলে দেয়। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় সমস্যাটি কতটা গুরুতর।
যদিও চিকিৎসকরা বলছেন এই রোগ নিয়ে বেশি ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বরং সময় মতো চিকিৎসা হলে সহজেই ডিসলিপিডেমিয়া সহজেই নিয়ন্ত্রণযোগ্য। নিয়মিত ওষুধ এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন যথেষ্ট সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য। মনে রাখবনে সঠিক সময়ে রোগ ধরা পড়াটাও গুরুত্বপূর্ণ।
যারা আগে থেকেই স্থূলতা, ডায়াবেটিস বা এমন কেউ যার পারিবারিকভাবে উচ্চ কোলেস্টেরলের ইতিহাস রয়েছে তাঁদের নিয়মিত লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করানোর উচিত। এতে শরীরে কিছু দানা বাঁধলে তা সময় মতো ধরা পড়ে।
কীভাবে সাবধান হবেন?
ডিসলিপিডেমিয়া এমনিতে লক্ষণহীন হলেও কিছু সূক্ষ্ম উপসর্গ দেখা থাকতে পারে যা দেখলে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। যেমন – বুক ধড়ফড় বা বুকে ব্যথা। হাঁপ ধরা বা শ্বাসকষ্ট। শরীরে অতিরিক্ত ক্লান্তি। অল্প কষ্টেই হাঁপিয়ে যাওয়া। উচ্চ রক্তচাপ এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এই রোগের লক্ষণ হতে পারে। শরীরে এই সব উপসর্গ থাকলে দেরী না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে শরীরে স্বাভাবিক লিপিড মাত্রা সাধারণত হওয়া উচিত এই ধরনের – LDL (খারাপ কোলেস্টেরল): ১০০ mg/dL-বা তার নিচে।
HDL (ভাল কোলেস্টেরল): পুরুষদের জন্য ৪০ mg/dL-এর বেশি। মহিলাদের ক্ষেত্রে ৫০ mg/dL-এর বেশি।
ট্রাইগ্লিসারাইড: ১৫০ mg/dL-এর নিচে।
মোট কোলেস্টেরল ২০০ mg/dL-এর নিচে