AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

জেনেটিক ত্রুটি সত্ত্বেও কিডনি প্রতিস্থাপন, বিরল অস্ত্রোপচারে বিশ্বের দরবারে রেকর্ড গড়ল নারায়ণা আরএন টেগোর হাসপাতাল

চিকিৎসাগত ও নৈতিক—দুই দিক থেকেই এটি ছিল এক অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতি। তবে রোগীর জীবন বাঁচানোর যে শপথ নিয়েছেন যে চিকিৎসরা, তাঁরা একটু তো ঝুঁকি নেবেনই। আর শেষমেশ, জিতে গেল সেই ঝুঁকি নেওয়া ডাক্তারদের দল। এই ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে এ ধরনের সফল প্রতিস্থাপন বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম, যা জটিল ও উচ্চ ঝুঁকির চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় নারায়ণা হেলথ-এর নেতৃত্ব এবং দক্ষতাকে বিশ্বদরবারে রেকর্ড গড়ল।

জেনেটিক ত্রুটি সত্ত্বেও কিডনি প্রতিস্থাপন, বিরল অস্ত্রোপচারে বিশ্বের দরবারে রেকর্ড গড়ল নারায়ণা আরএন টেগোর হাসপাতাল
| Edited By: | Updated on: Nov 26, 2025 | 7:36 PM
Share

এই অস্ত্রোপচার একেবারেই সাধারণ নয়। বরং এই অপারেশন চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে নতুন অধ্য়ায় রচনা করল। আর এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী রইল দক্ষিণ কলকাতার মুকুন্দপুরের নারায়ণা আরএন টেগোর হাসপাতাল। যা কিনা বিশ্বে এই প্রথম। কী ঘটল নারায়ণা আরএন টেগোর হাসপাতালের অন্দরে?

প্রতিবেশী দেশ ভূটান থেকে ছেলেকে নিয়ে মুকুন্দপুরের নারায়ণা আরএন টেগোর হাসপাতালে এসেছিলেন তাঁর বাবা। ছেলের কিডনির সমস্য়া এতটাই বেড়ে যায় যে, চিকিৎসকরা কিডনি প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ভূটানের এই তরুণের এই প্রতিস্থাপন এতটা সহজ নয়। কেননা, তাঁর দেহে ইতিমধ্যেই বাসা বেঁধেছে বিশ্বের অন্যতম অত্যন্ত বিরল জেনেটিক রক্তক্ষরণজনিত রোগ ‘ফ্যাক্টর VII ডেফিশিয়েন্সি’। জানা যায়, প্রতি পঞ্চাশ লক্ষে মাত্র একজন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন। এই রোগে আক্রান্ত তরুণের কিডনি প্রতিস্থাপন করাটা যে সহজ কাজ নয়, তা প্রথম থেকেই বুঝেছিলেন চিকিৎসকরা। তবে পিছপা হলেন না। বরং নিলেন চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ ছিল অন্য আরেকটিও। রোগীর জন্য উপযুক্ত একমাত্র দাতা ছিলেন তাঁর বাবাই, যিনি নিজেও একই জেনেটিক ত্রুটির বাহক। চিকিৎসাগত ও নৈতিক—দুই দিক থেকেই এটি ছিল এক অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতি। তবে রোগীর জীবন বাঁচানোর যে শপথ নিয়েছেন যে চিকিৎসরা, তাঁরা একটু তো ঝুঁকি নেবেনই। আর শেষমেশ, জিতে গেল সেই ঝুঁকি নেওয়া ডাক্তারদের দল। এই ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে এ ধরনের সফল প্রতিস্থাপন বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম, যা জটিল ও উচ্চ ঝুঁকির চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় নারায়ণা হেলথ-এর নেতৃত্ব এবং দক্ষতাকে বিশ্বদরবারে রেকর্ড গড়ল।

এই অস্ত্রোপচার নিয়ে বলতে গিয়ে নারায়ণা আরএন ঠাকুর হাসপাতালের রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট প্রোগ্রামের কনসালট্যান্ট এবং চিফ নেফ্রোলজিস্ট ডা. দীপক শঙ্কর রায় বলেন, “এই ঘটনা আমাদের চিকিৎসা সমন্বয়, অস্ত্রোপচার দক্ষতা এবং ধৈর্যের সীমাকে পরীক্ষা করেছে। রোগী সামান্য রক্তক্ষরণেই জীবন হারাতে পারতেন। অ্যানাস্থেশিয়া থেকে শুরু করে সেলাই পর্যন্ত প্রতিটি ধাপই আমাদের রিয়েল-টাইম ক্লটিং প্যারামিটার অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হয়েছে। এই অস্ত্রোপচারের সাফল্য আমাদের দলগত কাজ, সূক্ষ্ম পরিকল্পনা এবং পরিবারের আস্থার ফল। আমাদের বহু-বিভাগীয় দলের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অসামান্য সহযোগিতা এই সাফল্যের মূলভিত্তি। বিশেষ করে সার্জিক্যাল টিমের ডা. তরশিদ আলি জাহাঙ্গির এবং অ্যানাস্থেসিয়া টিমের ডা.তিতিসা সরকার মিত্রের অবদান আমরা বিশেষভাবে উল্লেখ করছি।”

এই বিরল রক্তক্ষরণজনিত রোগ সম্পর্কে বলতে গিয়ে নারায়ণা আরএন ঠাকুর হাসপাতালের কনসালট্যান্ট–হেমাটোলজি ডা. শিশির কুমার পাত্র বলেন, “গুরুতর ফ্যাক্টর VII ডেফিশিয়েন্সি এতটাই বিরল যে পৃথিবীতে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ মানুষের মধ্যে মাত্র একজন এই রোগে আক্রান্ত হন। এই রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত সূক্ষ্ম ভারসাম্যের উপর নির্ভর করে—অল্প ফ্যাক্টর VII মারাত্মক রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে, আবার বেশি হলে রক্ত জমাট বাঁধার গুরুতর ঝুঁকি তৈরি হয়। অস্ত্রোপচারের সময় এবং পরে প্রতি মিনিটে এই ভারসাম্য বজায় রাখা ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। রোগী ও তাঁর বাবা দু’জনেরই সুস্থতা আমাদের কাছে অত্যন্ত সন্তোষজনক।”

অস্ত্রোপচারের পর রোগীর পথচলা মসৃণ ছিল না। একটি ছোট রক্ত জমাট বাঁধার কারণে রোগী সাময়িক পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন, তবে নেফ্রোলজি, নিউরোলজি ও হেমাটোলজি দলের যৌথ ব্যবস্থাপনায় তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। বর্তমানে তাঁর ক্রিয়েটিনিন স্থিতিশীল রয়েছে এবং তিনি প্রতিস্থাপনের পর স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনযাপন করছেন।

নারায়ণা হেলথ–ইস্ট অঞ্চলের ডিরেক্টর ও ক্লাস্টার হেড এবং কর্পোরেট গ্রোথ ইনিশিয়েটিভ–ইস্টের প্রধান মি. অভিজিৎ সি.পি. দলের এই সাফল্যে গর্ব প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের চিকিৎসকরা শুধু একটি বিরল অস্ত্রোপচারই করেননি; এটি ছিল বিশ্বের সর্বাধিক বিরল ও গুরুতর ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি। তাঁরা এক তরুণকে নতুন জীবন দিয়েছেন এবং একই সঙ্গে তাঁর বাবার নিরাপত্তাও নিশ্চিত করেছেন। এই ধরনের সাফল্য পূর্ব ভারতে উন্নত চিকিৎসা দক্ষতার মানচিত্রকে বিশ্বমঞ্চে আরও দৃঢ় করে।”

এই সাফল্য সম্পর্কে নারায়ণা হেলথের গ্রুপ সিওও মি. আর. ভেঙ্কটেশ বলেন, “নারায়ণা হেলথ সর্বদাই চিকিৎসাবিজ্ঞানের সীমাকে অতিক্রম করে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করার পাশাপাশি সর্বোচ্চ নৈতিক মান বজায় রাখার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এই সফল প্রতিস্থাপন আমাদের বহু-বিভাগীয় সহযোগিতা, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ এবং সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া মানবিক সেবার প্রতিচ্ছবি। আমাদের দল নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত এবং পরিবারের আস্থার জন্য কৃতজ্ঞ।”