বিরলতমের থেকেও বিরল ঘটনা। এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকলেন রাঁচির এক বেসরকারি হাসাপাতালের শিশুরোগ চিকিত্সকরা। জানা গিয়েছে, গত বুধবার, ২১ দিনের এক শিশুকন্যার পেট থেকে মোট ৮টি অনুন্নত ভ্রূণ উদ্ধার করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ১০ অক্টোবর, রামগড়ে জন্মগ্রহণ করে ওই সদ্যোজাত। শিশুটি কান্না না থামায় বাড়ির সদস্যরা ভেবেছিলেন হয়তো পেটে ব্যথার কারণে কান্নাকাটি করছে। সেই কারণ নিয়েই রাঁচির এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাঁরা। চিকিত্সকরা টিউমার সন্দেহে ওই শিশুকন্যার সিটি স্ক্যান করার পরামর্শ দেন। কিন্তু শিশুর সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট দেখে চোখ কপালে ওঠে হাসপাতালের ডাক্তারদের।
সেখানে দেখা যায়, নবজাতকের পেটে রয়েছে আটটি ভ্রূণ। তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচার করা পরামর্শ দেওয়া হলে গত ১ নভেম্বর, মুখ্যমন্ত্রীর আয়ুষ্মান ভারত যোজনার আওতায় শিশুর পেট অপারেশন করে ওই ভ্রূণের মাংসপিণ্ড উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি ফেটাস-ইন-ফেটু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এমন ঘটনা বিরলতম বলেও কম বলা হয় বলে ডাক্তাররা উল্লেখ করেছেন। তাঁদের মতে, গর্ভস্থ সন্তান বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যমজের দেহ তার শরীরের মধ্যে আবদ্ধ থাকে। আর তাতেই শিশুর দেহের ভিতর থেকে পাওয়া যায় ভ্রূণের মাংসপিণ্ড।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ড. রাজেশ কুমার জানিয়েছেন, সিটি স্ক্যানের সময় দেখা গিয়েছে, ওই শিশকন্যার পেটে টিউমারের মত কিছু অংশ রয়েছে। কিন্তু অপারেশন করা পর যা সামনে আসে তা একেবারেই বেনজির ঘটনা। একরত্তির পেটে থেকে মোট ৮টি অনুন্নত ভ্রূণ বের করে আনা হয়েছে। একসঙ্গে আটটি ভ্রূণ উদ্ধার করার ঘটনা সম্ভবত এই প্রথম বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগেও বিভিন্ন হাসপাতালে সদ্যোজাতের দেহ থেকে ভ্রূণ উদ্ধার করার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু একসঙ্গে আটটি অনুন্নত ভ্রূণ অপসারণ করা বিশ্বে বিরল।
তিনি আরও জানিয়েছেন, সারা বিশ্বে এই ধরনের ঘটনা ১০০টিরও কম ঘটেছে। বেশিরভাগই পাকস্থলী থেকে একটি মাত্র ভ্রূণ বের করা হয়েছে। কিন্তু ২১ দিনের একটি শিশুর পেটে থেকে ৮টি অনুন্নত ভ্রূণ বের করা একেবারেই বিস্ময়কর ঘটনা।
পেডিয়াট্রিক সার্দন ড. মোহাম্মদ ইমরান জানিয়েছেন, শিশুর পরিবারও টিউমারের অভিযোগ নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। ২১ দিনের ওই শিশুকন্যাকে বিশেষ ব্যবস্থায় অপারেশন করা হয়েছিল। তবেএমন বিরলতম বিরল ঘটনা সারা বিশ্বে ঘটেনি। ঝাড়খণ্ডের ঘটনা যাতে সারা বিশ্বের কাছে প্রকাশ পায়, সেদিকটিও দেখতে হবে।
প্রসঙ্গত, গোটা অপারেশনটি করতে সময় লেগেছিল প্রায় দেড় ঘণ্টা। আপাতত শিশুটির শরীরের উপর বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পরই তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।