
আজকাল বিভিন্ন রকম স্ত্রীরোগ জাঁকিয়ে বসেছে মেয়েদের মধ্যে। তার মধ্যে যেমন PCOS রয়েছে তেমনই রয়েছে জরায়ুতে ফাইব্রয়েডের (Uterine fibroids) সমস্যা। যা ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড হিসেবেই পরিচিত। জরায়ু ও ইউটেরাসের মধ্যে পেশি সংযোগকারী কিছু পেশি থাকে। সেই পেশির বৃদ্ধি হলে তখন তাকে ফাইব্রয়েড বলা হয়। ফাইব্রয়েডগুলি একক নোডিউল (একটি বৃদ্ধি) বা একটি ক্লাস্টার হিসাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। ফাইব্রয়েড ক্লাস্টারগুলির আকার ১ মিমি থেকে ২০ সেমি (৮ ইঞ্চি) ব্যাসের বেশি বা তার চেয়েও বড় হতে পারে। জরায়ুর প্রাচীরের মধ্যেই এই ফাইব্রয়েড বৃদ্ধি পায়। ফাইব্রয়েড অনেক সময় জরায়ুর উপরেও হয়। এমনকী সংখ্যা ও আকারেও পরিবর্তন আসতে পারে। জরায়ু ফাইব্রয়েডে সব সময় যে উপসর্গ দেখা যায় এমন কিন্তু নয়। অনেকেই এই ফাইব্রয়েডের সমস্যা নিজে থেকে অনুভব করতে পারেন না।
ফাইব্রয়েড আসলে পেলভিসের খুব সাধারণ একটি বৃদ্ধি। প্রায় ৪০-৮০ শতাংশ মহিলার ক্ষেত্রে এই ফাইব্রয়েডের সমস্যা থাকে। অনেক মহিলাই তার কোনও লক্ষণ অনুভব করতে পারেন না। আর তাই তাঁরা বুঝতে পারেন না যে তাঁদের ফাইব্রয়েড রয়েছে। ফাইব্রয়েডের আকার যদি ছোট হয় তাহলে তা টের পাওয়া যায় না। এমন সমস্যাকে কিন্তু অ্যাসিম্পটোমেটিক বলা হয়। তবে যাঁদের ওজন বেশি, ওবেসিটির সমস্যা থাকে, পারিবারিক ইতিহাসে ফাইব্রয়েড থাকে, সন্তান হয় না, মাসিক অনেক কম বয়সে শুরু হয়, মেনোপজ দেরীতে হয় বা প্রতি মাসে সঠিক দিনে পিরিয়ডস হয় না, রক্তপাত প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হয় সেখানেও কিন্তু ফাইব্রয়েডের সমস্যা দেখা দেয়। ফাইব্রয়েডের আকার ও অবস্থানের উপর নির্ভর করে চিকিৎসা পদ্ধতি। সেগুলির আকারের উপর নির্ভর করে চিকিৎসা করা হয়।
ফাইব্রয়েড দেখতে কেমন?
ফাইব্রয়েড সাধারণত গোলাকার হয়। কিছুক্ষেত্রে পাতলা স্টেম এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ছোট মাশরুমের মত আকৃতি নেয়। এই ফাইব্রয়েড থেকে যে ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে তা নয়। ফাইব্রয়েড থেকেই পরবর্তীকালে টিউমার হয়। আর ফাইব্রয়েড থেকে ৩৫০ জনের মধ্যে ১ জনের ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকে। যদিও ক্যানসার যে পরবর্তীতে আসবে না তা কিন্তু জোর দিয়ে বলা যায় না। মেনোপজের সময় থেকেই এই ফাইব্রয়েডের সমস্যা বাড়তে থাকে। তাই প্রত্যেক মহিলার তখন থেকেই সাবধানে থাকা উচিত। ফাইব্রয়েড হলে যে সব সমস্যা প্রায়শই হয়-
*পিরিয়ডসের সময় অতিরিক্ত ব্যথা, বেদনাদায়ক রক্তপাত
*মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত
*তলপেট ভারী লাগা
*ঘন ঘন প্রস্রাবে যাওয়া ( কারণ ফাইব্রয়েডের সমস্যা হলে তা মূত্রাশয়ের উপর চাপ দেয়)
*সহবাসের সময় ব্যথা
*কোমরে ব্যথা
*কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্ভাবনা
*দীর্ঘস্থায়ী যোনিস্রাব
*প্রস্রাব পরিষ্কার না হওয়া, তলপেটে অস্বস্তি
ফাইব্রয়েড সবসময়ই বিনাইন অর্থাৎ ক্যানসার নয়। জেনে রাখুন ফাইব্রয়েড কখনই ক্যানসারে পরিবর্তিত হয় না। খুব ছোট মটর দানার আকৃতি থেকে শুরু করে টেনিস বলের মত বড়সড় আকারের ফাইব্রয়েড বা টিউমার হতে পারে। অনেক সময় ফাইব্রয়েডের পাশাপাশি গর্ভে ভ্রূণ আসতে পারে। যদি ফাইব্রয়েড ডিম্বাণু নিঃসরণ বা ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের পথে কোনও বাধা না হয়ে দাঁড়ায় তবে স্বাভাবিক ভাবে অন্তঃসত্ত্বা হতে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। শরীরে ভিটামিন-ডি এর অভাব হলেও কিন্তু সেখান থেকে এই সমস্যা আসতে পারে।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।