
ডাউন সিনড্রোম হল একটি জেনেটিক সমস্যা। এই ক্ষেত্রে শিশুটি জন্মায় একটি বাড়তি ক্রোমোজম নিয়ে। গর্ভাবস্থা থেকে শিশুর জন্মের পর শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এই ক্রোমোজম। বাড়তি এই ক্রোমোজমকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হয় ট্রাইসমি। ২১ মার্চ বিশ্বজুড়ে ডাউন সিনড্রোম দিন হিসেবে পালন করা হয়। একটি শিশু জন্মের সময় ৪৬টি ক্রোমোজম নিয়ে জন্মায়। ডাউন সিনড্রোমের ক্ষেত্রে একটি ক্রোমোজম বেশি থাকে। ডাউন সিনড্রোমের জন্য কখনই মা দায়ী নন। এর জন্য দায়ী আমাদের জিন।
আজ থেকে ১০ বছর আগেও মানুষ বিষয়টি নিয়ে এত সচেতন ছিলেন না। ফলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষাও করাতেন না। এমন রোগ নিয়ে শিশু জন্ম নিলে অভিশাপ মনে করতেন। অনেক সময় দেখা গিয়েছে যাঁরা বেশি বয়সে মা হন তাঁদের সন্তানদের মধ্যে ডাউন সিনড্রোমের সম্ভাবনা থেকে যায়। যদিও চিকিৎসা শাস্ত্রে এমন কোনও উল্লেখ নেই। ডাউন সিনড্রোমে ভোগা শিশুদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। সেই সঙ্গে হার্টেরও আলাদা করে যত্ন নিতে হয়। এছাড়াও এই সব বাচ্চাদের ক্ষেত্রে রক্তাল্পতার সমস্যা থাকে, থাইরয়েডের সমস্যা থাকে। কিছু ক্ষেত্রে লিউকোমিয়াও ধরা পড়ে।
বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অনেক অগ্রগতি এসেছে। ডাউন সিনড্রোম নির্ধারণের ক্ষেত্রে যে টেস্ট করানো হয় তাতে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই রোগ চিহ্নিত হয়। মাত্র ৫ শতাংশ থাকে ফলস পজিটিভিটি রেট। আর তাই গর্ভাবস্থার একেবারে খুব প্রাথমিক পর্যায় থেকেই চিকিৎসকেরা বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষা, আলট্রা সাউন্ড এসব করতে দেন। এই আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমেই গর্ভস্থ শিশুর সঠিক অবস্থান জানা যায়। এরফলে পরবর্তীতে গর্ভধারণকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্পর্কে সেই দম্পত্তি সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে সুবিধা পেতে পারেন। ডিএনএ টেস্ট থেকেই গর্ভস্থ সন্তানের জিন সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পাওয়া যায়। স্ক্রিনিং পদ্ধতির ফল ইতিবাচক হলে তখন চিকিৎসক সেই মত সিদ্ধান্ত নেন। আলট্রা সাউন্ডের মাধ্যমেই এই পরীক্ষা করা হয়। এই স্ক্যানে গর্ভস্থ সন্তানের ঘাড়ের পিছনের দিকে একটি পরীক্ষা করা হয়। কারণ যারা ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত হয় তাদের ঘাড়ের কাছে অতিরিক্ত তরল দেখতে পাওয়া যায়।
সেই সঙ্গে প্রথম তিনমাসের মধ্যে অকটি রক্তপরীক্ষাও করা হয়। PAPP-A প্রোটিন ও hCG হরমোনের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। নির্ধারিত সীমার বাইরে গেলেই ডাউন সিনড্রোমের আশঙ্কা করা হয়। গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় পর্যায়েও আবার এই রক্তপরীক্ষা করা হয়। যদি তাতে দেখা যায় যে হরমোনের মাত্রা একই থাকছে তাহলে চিকিৎসকেরা একদম নিশ্চিত হয়ে যান যে গর্ভস্থ সন্তান ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত।