Blood Cancer in Kids: শিশুদের ব্লাড ক্যান্সার! কীভাবে চিনবেন আগাম লক্ষণ?
Leukemia in Children: সমস্যা হল, অনেকেই ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। অথচ ব্লাড ক্যান্সারের প্রাথমিক কিছু লক্ষণ থাকে। উপসর্গগুলি আগে থেকে চিহ্নিত করা গেলে রোগীর চিকিৎসাও আগাম শুরু করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপনও করতে পারে।

সম্প্রতি ১০ বর্ষীয় শিশু অভিনেতা রাহুল কোলি প্রাণ হারিয়েছে এক অসুখে। জানা যাচ্ছে রাহুল ভুগছিল লিউকেমিয়ায়। তার অভিনীত ছবি চেল্লো শো মুক্তি পাওয়ার আগেই ঘটে এই অঘটন। অস্কারের জন্য মনোনীতও হয়েছে ছবিটি। অবশ্য রাহুলের বাবা তার অসুখের ব্যাপারে আলাদা করে কিছু জানাননি। তিনি শুধু বলেছেন,অন্তিম শ্বাস নেওয়ার আগে রাহুল প্রচণ্ড বমি করছিল। সমগ্র বিশ্বেই বয়ঃসন্ধিকালের বাচ্চা এবং শিশুদের মধ্যে শৈশবের লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার এখন যথেষ্ট পরিচিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, শৈশবের ব্লাড ক্যান্সারের সঠিক সময়ে চিকিৎসা এবং রোগ নির্ণয় অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। জানলে অবাক হবেন, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসায় অনেক ভালো সাড়া দেয়।
ব্লাড ক্যান্সার কী? কীভাবে শরীরে ক্ষতি করে?
আন্তর্জাতিক ক্যান্সার সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে লিউকেমিয়া হল এক ধরনের ক্যান্সার যা রক্তের শ্বেত রক্তকণিকাগুলির উপর আঘাত হানে। অথচ শরীরে শ্বেত রক্তকণিকাগুলিই বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ ও অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল শ্বেত রক্তকণিকা। ফলে এই ধরনের রক্তকণিকা প্রভাবিত হলে অস্থিমজ্জা থেকে আরও বেশি সংখ্যায় ও অস্বাভাবিক প্রকৃতির শ্বেত রক্তকণিকা তৈরি হতে থাকে। এরপর রক্তপ্রবাহের সঙ্গে মিশে যায় ও সারা শরীরে ঘুরে বেড়ায়। দেহের অন্যান্য অঙ্গেও প্রবেশ করে। স্বাস্থ্যকর কোষগুলির ক্ষতি করতে থাকে। স্বাস্থ্যকর ও সুস্থ কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হলে রোগজীবাণুর পক্ষে ওই অঙ্গগুলিতে আঘাত হানাও সহজ হয়ে যায়। শরীর হয়ে পড়ে দুর্বল।
মনে করা হয়, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা এই ধরনের সংক্রমণের সঙ্গে অনেক ভালোভাবে লড়তে পারে। কারণ বয়স কম হওয়ায় তাদের শরীর তখনও সংক্রমণের সঙ্গে লড়ার প্রক্রিয়াগুলি শেখার অবস্থায় থাকে। তাই ক্যান্সারের চিকিৎসায় ইতিবাচক সাড়া মেলে।
শিশুদের রক্তের ক্যান্সার: ঝুঁকির কারণ
•আলাদা করে কোনও ঝুঁকি নেই। তবে আগে থেকে কোনও অসুখ থাকলে ও তার সঙ্গে শিশুকে লড়তে হলে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। উদাহরণ হিসেবে জন্মগতভাবেই শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কিত অসুস্থতার কথা বলা যায়।
•শিশুটির পরিবারে ইতিমধ্যেই কেউ ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও ওই শিশুটির ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এই সমস্যাকে বলে লি-ফ্রুমেনি সিনড্রোম। অর্থাৎ বংশগত ক্যান্সারের প্রবণতা। সংক্রামিত জিনের কারণে শিশুটির ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
•রেডিওঅ্যাকটিভ (তেজষ্ক্রিয়) পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণেও যেমন অসুখটি হতে পারে তেমনই মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ যেমন বেঞ্জিনের সংস্পর্শে আসার কারণেও হতে পারে অসুখটি।
লক্ষণ কী?
বেশিরভাগ শিশুর দেহেই কোনও অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায় না। কারণ রোগটি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কিত অসুখ। ফলে সাধারণ রোগভোগে যেমন অন্য বাচ্চারা ভোগে তেমনই ভোগে রক্তের ক্যানাসারে আক্রান্ত শিশুরাও। তবে কিছু লক্ষণ দেখলে অবশ্যই সতর্ক হন—
• মাত্রাতিরিক্ত ক্লান্তি: বেশিরভাগ সময়েই শিশু ক্লান্ত বোধ করলে, ও অন্য বাচ্চাদের মতো খেলাধূলা করতে না পারলে বুঝতে হবে ওদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সংক্রান্ত কোনও সমস্যা আছে।
•রক্তপাত বা ত্বকে রক্ত জমাট বাঁধার মতো উপসর্গ: বাচ্চারা খেলা করার সময় ওদের দেহে আঘাত লাগবেই। ছোটখাট চোট আঘাত পাওয়ার পরে তা সেরেও যায় অল্প কয়েকদিনের মধ্যে। তবে সামান্য আঘাতও দীর্ঘদিন ধরে না সারলে তা চিন্তার ব্যাপার। এছাড়া সামান্য আঘাতেও বাচ্চার রক্তপাত শুরু হলে বুঝতে হবে বিষয়টা চিন্তার।
•ঘন ঘন জ্বর: প্রাপ্ত বয়স্ক ও শিশু উভয়ের ক্ষেত্রেই ঘনঘন জ্বর আসা কিন্তু চিন্তার ব্যাপার। সাধারণ চিকিৎসা সত্ত্বেও বারবার জ্বর আসা ও জ্বর সারতে না চাওয়া কিন্তু অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করাতে হবে।
শ্বাসকষ্ট ও কাশি: ফুসফুস সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকা না সত্ত্বেও বাচ্চার বারবার কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা তৈরি হলে সতর্ক হন। সামান্য পরিশ্রমেই বাচ্চা হাঁফিয়ে গেলেও সতর্ক হন ও প্রয়োজনীয় টেস্ট করান।
•আবার মাড়ির সমস্যা, সারা শরীরে র্যাশ, একটানা ওজন হ্রাস, শরীরের কোনও অংশে ফোলা ভাব যা বারবার চলে যায় ও ফিরে আসে, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, খিঁচুনি, অস্বাভাবিক ধরনের মাথা ব্যথা এবং বমি হলে সতর্ক হতে হবে।
