জানেন কি বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৬ জনের মধ্যে একজন ভারতীয়? হ্যাঁ, ডায়াবেটিস এখন মহামারীতে পরিণত হয়েছে। একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে যে স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো নিয়ে সবচেয়ে বেশি সচেতন হওয়া জরুরি, তার মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস। বিশ্বজুড়ে থাবা বসিয়েছে এই রোগ। ভারতও বাদ নেই সেই তালিকা থেকে। গত ১৪ নভেম্বরই বিশ্বজুড়ে পালিত হয়েছে ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’। রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতেই এই দিন পালন। কিন্তু কতজন মানুষ এই রোগ এবং রোগের গুরুতর প্রভাব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, সে প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস কারও হাতে থাকে না। এটি হল এমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা যেখানে শরীর নিজে থেকে ইনসুলিন হরমোন তৈরি করতে পারে না। যার জেরে শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে শুরু করে। এই অবস্থায় নিয়মিত ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন গ্রহণ করতে হয়। বাচ্চা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক, যে কোনও বয়সের মানুষই টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে।
কিন্তু এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে চিন্তা তৈরি করছে টাইপ-২ ডায়াবেটিস। টাইপ-২ ডায়াবেটিসেও শরীর ইনসুলিন হরমোন তৈরির ক্ষমতা হারায়। কিন্তু সমস্যা হল এই টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের হাতেই থাকে। অস্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অত্যধিক মানসিক চাপ টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। আর একবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে সহজে নিস্তার মেলে না এই রোগের হাত থেকে। অবস্থার অবনতি ঘটলে ধীরে ধীরে চোখ, কিডনি, পা নষ্ট হয়ে থাকে। সহজে ক্ষত সারতে চায় না। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হতে থাকে। মানুষ তখনই নিজের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বুঝতে পারে যখন কোনও গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়।
পরিসংখ্যান অনুসারে, ভারতে প্রায় ৭৭ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ আজ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তার চেয়েও বড় বিষয় হল, এই ৭৭ মিলিয়নের মধ্যে ৫৭% মানুষ তাঁদের স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে জানেনই না। ৫৭ শতাংশ মানুষ জানেন না যে তাঁরা এমন একটি মারণ রোগের সঙ্গে বসবাস করছেন। আর যদি কিছু মানুষ নিজের স্বাস্থ্য অবস্থা সম্পর্কে জেনেও থাকেন, তাঁদের কাছে চিকিৎসা করানোর মতো সুযোগ নেই। মেডিক্যাল সায়েন্স উন্নত হলেও অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর জেরে অনেকেই চিকিৎসা সুবিধা পান না। এছাড়াও অপুষ্টি, সচেতনতার অভাবও রয়েছে।
IMCR-India DIAB সমীক্ষা অনুসারে, গ্রামীণ এলাকার তুলনায় শহরাঞ্চলে ডায়াবেটিস এবং প্রি-ডায়াবেটিসের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। শহরাঞ্চলে ১১.২% মানুষ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে রয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় এই সংখ্যাটা ৫.২%। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিসের মতো রোগকে দমন করতে গেলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।