
PCOD বা Polycystic Ovarian Disease এক হরমোনজনিত সমস্যা, যা মূলত প্রজননক্ষম বয়সী মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়। এই অবস্থায় ডিম্বাশয়ে একাধিক ক্ষুদ্র সিস্ট তৈরি হয় এবং ডিম্বস্ফোটনের প্রক্রিয়া (ovulation) ব্যাহত হয়। এর ফলে ঋতুচক্র অনিয়মিত হয়ে যায়। PCOD-এ শরীরে পুরুষ হরমোন অ্যান্ড্রোজেন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় উৎপন্ন হয়, যার কারণে মুখে ব্রণ, চুল পড়া, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, মুখ ও শরীরে অনাকাঙ্ক্ষিত লোমের বৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদে PCOD ডায়াবেটিস, বন্ধ্যাত্ব, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
PCOD নিরাময়যোগ্য নয়, তবে জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বিশেষ করে ডায়েট এই সমস্যার মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
PCOD থেকে বাঁচতে ডায়েটে কী কী পরিবর্তন করতে হবে?
১. পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চলুন – সাদা চাল, ময়দার রুটি, পরোটা, বিস্কুট, কেক, পেস্ট্রি, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি খাবারে উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচক থাকে। এগুলো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায়, যা PCOD-এর অন্যতম মূল কারণ। এর বদলে ব্রাউন রাইস, ওটস, মাল্টিগ্রেইন আটা, জোয়ার, বাজরা বা রাগির মতো জটিল শর্করা বেছে নিতে হবে।
২. চিনি বা মিষ্টি খাওয়া কমান – চিনি, মিষ্টি, সফট ড্রিঙ্কস, জুস, প্যাকেটজাত মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি। এগুলো রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বাড়ায়, ফলে ইনসুলিনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর বদলে প্রাকৃতিক মিষ্টির উৎস যেমন খেজুর, ডুমুর বা সামান্য পরিমাণ মধু ব্যবহার করা ভাল।
৩. পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করুন – ডায়েটে ডাল, ছোলা, মুগডাল, রাজমা, পনির, ডিম, মাছ ও মুরগি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। প্রোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে অযথা খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
৪. স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খাওয়া – অলিভ অয়েল, নারকেল তেল, ফ্ল্যাক্সসিড, আখরোট, বাদাম, চিয়া সিড ও মাছের মতো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তবে ভাজা-পোড়া ও ট্রান্স ফ্যাট সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা উচিত।
৫. ফাইবার খাবার বাড়ান – ফল, শাকসবজি, পূর্ণ শস্য ও ডাল জাতীয় খাবারে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা হজম ভালো রাখে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ৪-৫ রকমের সবজি ও ২-৩ রকমের ফল খাওয়া উচিত।
৬. দুগ্ধজাত খাবার বেছে নিন – কিছু মহিলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার PCOD-এর উপসর্গ বাড়াতে পারে। তাই লো-ফ্যাট দুধ, দই বা ছাঁচ পরিমিত মাত্রায় খাওয়া উচিত।
৭. পর্যাপ্ত জল পান করুন – দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস জল খেলে শরীর ডিটক্স হয়, বিপাকক্রিয়া (metabolism) সচল থাকে এবং হরমোনের কার্যকারিতা উন্নত হয়।