
অন্ত্র কেবল খাবার হজম করতে নয়, অনেক ক্ষেত্রে শরীরের কমান্ড সেন্টার হিসেবে কাজ করে। মেটাবলিজম থেকে শুরু করে আপনার মুড কেমন থাকবে সব নির্ভর করে অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উপর। অন্ত্র হরমোনের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে। শরীর কতটা পুষ্টি শোষণ করতে পারবে সেটিও নির্ধারণ করে।
আপনার অন্ত্র সুস্থ কিনা, তা বোঝা যায় শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিডস (SCFAs) উৎপাদনের মাধ্যমে। যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে এবং হজমশক্তি বাড়ায়। অথচ খারাপ খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ বা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এই ভারসাম্য নষ্ট করলে অন্ত্রের সুরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ, পুষ্টিহীনতা এমনকি মেটাবলিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। যদিও বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিনের কিছু অভ্যাসে অন্ত্রকে ভাল রাখতে সাহায্য করে।
খাবারে ফাইবার যোগ করুন – ফাইবার কম খেলে অন্ত্রের ভাল ব্যাকটেরিয়া প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না। শরীরে ভাল ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমলে কম পরিমাণে শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিডস (SCFAs) তৈরি করে। অথচ এগুলি অন্ত্রের আস্তরণ মজবুত রাখতে, প্রদাহ কমাতে এবং স্বাস্থ্যকর মেটাবলিক সংকেত বজায় রাখতে অপরিহার্য। সময়ের সঙ্গে ফাইবারের ঘাটতি কোষ্ঠকাঠিন্য, আইবিএস, ক্রোন্স রোগ এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। তাই ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন— শস্য, ডাল, ফল এবং সবজি খান। এগুলি প্রোবায়োটিকের মতো কাজ করে।
চিনির খাওয়ার পরিমাণ কমান – অতিরিক্ত পরিমাণে পরিশোধিত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া অন্ত্রের রাসায়নিক গঠন পাল্টে দেয়। এগুলি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বাড়ায়, অন্ত্রের প্রাচীরকে দুর্বল ও ফাঁপা করে তোলে, ফলে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ রক্তে মিশে যায়। এতে সারা শরীরে প্রদাহ, ইনসুলিনের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়া এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ে। চিনি ও পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট নিয়ন্ত্রণ করলে অন্ত্রের ভাল থাকে।
খাবার খাওয়ার সময় অন্য বিষয়ে মন দেবেন না – খুব ঘন ঘন, খুব তাড়াতাড়ি বা মানসিক চাপের মধ্যে খাবার খেলে শরীরের প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম (PSNS) দমে যায়। এতে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। এনজাইম উৎপাদন কমে,অন্ত্রের আস্তরণ ফাঁপা হয়ে প্রদাহ ও পুষ্টি শোষণে সমস্যা তৈরি হয়। ভাল করে চিবিয়ে খেলে PSNS সক্রিয় হয় হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।
খাবারের সময় নির্দিষ্ট করুন – খাবারের মাঝে অন্ত্রকে প্রকৃত বিশ্রাম দেওয়া মানে তাকে শ্বাস নেওয়ার সময় দেওয়া। দীর্ঘ বিরতি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে, প্রদাহ কমায় এবং ব্যাকটেরিয়াদের বারবার খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, যা হজমের ছন্দ নষ্ট করতে পারে। কেবল কী খাচ্ছেন তা নয়, কখন খাচ্ছেন এবং কীভাবে হজম শুরু করছেন সেটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ।