
শীতকাল মানেই ঠান্ডা লাগা, সর্দি-কাশির প্রকোপ এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ভয়। এই সময় শরীরকে ভেতর থেকে উষ্ণ ও মজবুত রাখতে আয়ুর্বেদে একটি দারুণ সমাধান রয়েছে। রাতে ঘুমানোর আগে হালকা গরম দুধে এক চামচ চ্যবনপ্রাশ মিশিয়ে খাওয়া। চ্যবনপ্রাশ হল আমলকি, মধু, ঘি এবং প্রায় ৪০টিরও বেশি ভেষজের এক শক্তিশালী মিশ্রণ। যা হাজার বছর ধরে বিশেষ টনিক হিসেবে পরিচিত। রাতে এই মিশ্রণটি পান করলে চমৎকার উপকারিতা পাওয়া যায়। চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
আয়ুর্বেদ অনুসারে, চ্যবনপ্রাশ একা যেমন শক্তিশালী, তেমনি গরম দুধের সঙ্গে খেলে এর কার্যকারিতা বহুগুণ বেড়ে যায়। দুধ এখানে ‘অনুপান’ বা বাহক হিসেবে কাজ করে। যা চ্যবনপ্রাশের ভেষজ উপাদানগুলিকে শরীরের কোষ পর্যন্ত সহজে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে।
চ্যবনপ্রাশের মূল উপাদান আমলকি, যা ভিটামিন সি (Vitamin C) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। রাতে এটি খেলে শরীর সারারাত ধরে এর গুণাগুণ শোষণ করে। শীতকালে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে এটি শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দৃঢ় করে। নিয়মিত এই মিশ্রণ পান করলে সর্দি-কাশি, ফ্লু এবং গলা ব্যথার মতো শীতকালীন সমস্যাগুলি দূরে থাকে।
হালকা গরম দুধে থাকে ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা শরীরে মেলাটোনিন (ঘুমের হরমোন) এবং সেরোটোনিন নিঃসরণে সাহায্য করে। চ্যবনপ্রাশের ভেষজগুলি স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে। এই মিশ্রণ মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায়, ফলে দ্রুত গভীর ও আরামদায়ক ঘুম আসে। ভাল ঘুম মানেই পরদিন সকালে সতেজ ও চাঙ্গা অনুভব করা।
চ্যবনপ্রাশে উপস্থিত কিছু ভেষজ, যেমন পিপুল, হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। গরম দুধ হজম প্রক্রিয়াকে মসৃণ করে। রাতে খেলে হজমতন্ত্র শান্ত হয় এবং খাদ্য থেকে পুষ্টির শোষণ উন্নত হয়। শীতকালে অনেকেই ভারী খাবার খান, যা হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। এই মিশ্রণ কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
চ্যবনপ্রাশকে ‘রসায়ন’ বলা হয় কারণ এটি শরীরের টিস্যুগুলিকে পুষ্টি জোগায় এবং জীবনীশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। রাতে ঘুমানোর সময় শরীর নিজেকে মেরামত করে; এই সময়ে চ্যবনপ্রাশ এই মেরামত প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। দুর্বলতা ও ক্লান্তি দূর করে, বিশেষত বয়স্ক এবং শিশুদের জন্য এটি খুব উপকারী।
শীতকালে রাতে ঘুমানোর আগে হালকা গরম দুধে চ্যবনপ্রাশ মিশিয়ে খাওয়া কেবল একটি ঐতিহ্য নয়, এটি আয়ুর্বেদিক স্বাস্থ্য রক্ষার একটি প্রমাণিত কৌশল। এই অভ্যাস একদিকে যেমন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করবে, তেমনি অন্যদিকে একটি আরামদায়ক ও গভীর ঘুম নিশ্চিত করবে। সুতরাং, আপনি যদি শীতকালে স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত থাকেন, তাহলে আজ থেকেই এই সোনালী মিশ্রণটিকে আপনার রাতের রুটিনে যোগ করুন—সুস্থ থাকুন এবং শীতকাল উপভোগ করুন!