
হার্টে ব্লক মানে হৃদপিণ্ডের ধমনীতে (coronary artery) রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হওয়া। আমাদের হৃদযন্ত্র সব সময় অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পায় হৃদপিণ্ডের বাইরের তিনটি প্রধান ধমনী থেকে। কিন্তু যদি এই ধমনীগুলোর মধ্যে কোনও একটি বা একাধিক অংশে চর্বি (Fat), কোলেস্টেরল, ক্যালসিয়াম বা অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ জমে যায়, তখন ওই রক্তনালীগুলি সরু বা একেবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এটাকেই হার্ট ব্লক বা করোনারি আর্টারি ডিজিজ বলা হয়।
হার্ট ব্লক কেন হয়?
১. অতিরিক্ত কোলেস্টেরল:
খাবারে অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাট থাকলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা বেড়ে যায়, যা ধমনীর দেয়ালে জমে ব্লক তৈরি করে।
২. উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড প্রেসার):
চাপ বেশি থাকলে ধমনীর দেয়ালে ক্ষতি হয় এবং চর্বি সহজে জমে যায়।
৩. ডায়াবেটিস:
রক্তে শর্করার ভারসাম্যহীনতা ধমনীর গঠন নষ্ট করে ও ব্লকের ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. ধূমপান ও মদ্যপান:
এগুলি রক্তনালীর দেয়াল দুর্বল করে ও রক্ত ঘন করে, ফলে ব্লকের আশঙ্কা বাড়ে।
৫. স্থূলতা ও ব্যায়ামের অভাব:
অতিরিক্ত ওজন ও অলস জীবনধারা ধমনীর মধ্যে ফ্যাট জমার প্রধান কারণ।
৬. জেনেটিক কারণ:
পরিবারে হার্টের রোগের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেশি।
হার্ট ব্লকের লক্ষণ:
১। বুকে ব্যথা বা চেপে ধরা ভাব (angina)
২। বুকের ব্যথা হাত, ঘাড় বা চোয়ালে ছড়িয়ে পড়া
৩। শ্বাসকষ্ট
৪। অতিরিক্ত ঘাম
৫। দুর্বলতা ও মাথা ঘোরা
৬। হাঁটাচলা বা কাজ করার সময় ক্লান্তি
কখনও কোনও উপসর্গ ছাড়াও ব্লক থাকতে পারে, যা নীরব হত্যাকারীর মতো আচরণ করে।
ফলাফল কী হতে পারে?
হার্টে ব্লক হলে পর্যাপ্ত রক্ত ও অক্সিজেন হৃদযন্ত্রে না পৌঁছালে হার্ট অ্যাটাক (myocardial infarction) হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না হলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে।
প্রতিরোধ করবেন কীভাবে?
১। স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন (কম চর্বি ও বেশি ফল-শাকসবজি)
২। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম
৩। ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করুন
৪। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
৫। নিয়মিত ব্লাড প্রেসার, সুগার ও কোলেস্টেরল পরীক্ষা করান
হার্ট ব্লক একটি নীরব বিপদ হতে পারে। সচেতন জীবনযাপন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালে এটি অনেকটাই প্রতিরোধযোগ্য।