জানলে অবাক হবেন বর্তমান সময়ে ইসবগুলের (Isabgul) অন্যতম রপ্তানিকারক দেশ ভারত। অর্থাৎ বিদেশের লোক কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভারতের ইসবগুল কিনছেন। প্রশ্ন হল কেন? কী রয়েছে ইসবগুলে? ডায়েটিশিয়ানরা বলছেন ইসবগুলের প্রকৃত নাম সিলিয়াম হাস্ক (Psyllium Husk)। এহেন সিলিয়াম হাস্ক সঠিক নিয়মে সেবন করলে একাধিক অসুখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সেগুলি কী কী? চিকিৎসকরা বলছেন অনেকেই ভোগেন কনস্টিপেশনে (Constipation) । দীর্ঘদিনের কনস্টিপেশন থেকে হতে পারে পাইলস ও ফিসারের সমস্যা। এছাড়া মাত্রাতিরিক্ত ভাজাভুজি খাওয়া ও বংশগত কারণেও অনেকের শরীরে কোলেস্টরলের আধিক্য দেখা যেতে পারে। এমন ব্যক্তিদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা (Cholesterol Level) হ্রাস করতেও কার্যকরী ইসবগুল। এখানেই শেষ নয়। আধুনিক জীবনশৈলীর কারণে বহু মানুষ ভোগেন স্থূলত্বের সমস্যায়। দেহ থেকে মাত্রাতিরিক্ত ওজন ঝরাতে সাহায্য করতে পারে ইসবগুল। জানলে অবাক হবেন উপরিউক্ত সমস্যা ছাড়াও ইসবগুল আরও নানা সমস্যার সমাধানে সক্ষম।
ইসবগুল কী?
প্ল্যান্টাগো ওভাটা নামের একটি গাছের বীজ থেকে তৈরি হয় ইসবগুল।
ইসবগুলে আছেটা কী?
ইসবগুলের কোনও পুষ্টিগুণ নেই। ইসবগুল সম্পূর্ণরূপে ক্যালোরিহীন ফাইবার। এই ফাইবার দ্রুত এবং অনেকটা পরিমাণে জল শোষণ করার ক্ষমতা রাখে। তাই ইসবগুল খেলে যে মল তৈরি হয় তার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জল থাকে। তাই স্টুল হয় নরম। এছাড়া ফাইবার থাকায় স্টুলেরও পরিমাণও বাড়ে।
ইসবগুল খাওয়ার উপকার
কোষ্ঠকাঠিন্য: শাকসব্জি খাওয়ার পাট প্রায় আমরা সকলেই চুকিয়ে ফেলেছি। সপ্তাহে পাঁচদিন সকালে স্যান্ডুইচ দিয়ে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চে নুডলস আর ডিনারে বিরিয়ানি ছাড়া আমাদের চলে না। অর্থাৎ খাবারে ফাইবারজাতীয় উপাদান থাকে অত্যন্ত কম। এর ফলে বেশিরভাগ ব্যক্তিই শিকার হন কোষ্ঠকাঠিন্যের। অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে কোমডে বসে চোখ দিয়ে জলও বেরিয়ে যায়। এমনকী কেউ কেউ পাইলস ও ফিসারেও আক্রান্ত হন। মলদ্বার থেকে রক্তপাত রুটিন ব্যাপার হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত অপারেশন ছাড়া গতিও থাকে না। এমন ধরনের দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি দিতে পারে ইসবগুল। কারণ আগেই বলা হয়েছে ইসবগুল মলের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে মলের পরিমাণেরও বৃদ্ধি ঘটায়। মল নরমও করে। তাই প্রতিদিন রাতে ও সকালে খাবার খাওয়ার আগে একগ্লাস জলে মিশিয়ে খান ইসবগুল। প্রতিবার কমপক্ষে ১০ গ্রাম করে ইসবগুল খেতে পারেন। এমনকী পাইলস বা ফিসার থাকলেও খাওয়া যায় ইসবগুল। তাতে নিরাময় ত্বরান্বিত হয়।
ওজন কমাতে: অনেক চেষ্টা করেও ওজন কমাতে পারেন না অনেকে! এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে ইসবগুল। কারণ ইসবগুলে কোনও ক্যালোরি থাকে না। অথচ ফাইবার থাকে প্রচুর পরিমাণে। তাই খাবার খাওয়ার আগে ইসবগুল খেলে পেট ভর্তি থাকার অনুভূতি মেলে। উল্টোপাল্টা খাবার বেশি খাওয়া যায় না। শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরির প্রবেশ বন্ধ হয়। ওজন বাড়ার ঝক্কি থেকেও মেলে মুক্তি। এছাড়া মেটাবলিজমেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে ইসবগুল। তাই নিয়মিত ইসবগুল খেলে ধীরে ধীরে কমতে থাকে ওজন। তাই খাবার খাওয়ার আধঘণ্টা আগে একগ্লাস ঈষদুষ্ণ জলে ইসবগুল মিশিয়ে নিয়ে তার মধ্যে লেবুর রস চিপে দিন। এইভাবে ইসবগুল খেলে কয়েকদিনের মধ্যেই পার্থক্যটা টের পাবেন। রাতে এবং সকালে খাবার আগে এভাবে ইসবগুল খাওয়া যেতে পারে।
মোটামুটি ১০ থেকে ২০ গ্রাম মাত্রায় প্রতিদিন ইসবগুল খাওয়া যেতে পারে।
হজম ক্ষমতা বাড়ায়: ইসবগুল মল নির্গমণে সাহায্য করে বলে অন্ত্র থাকে পরিষ্কার। ফলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ দীর্ঘ সময় ধরে অন্ত্রে থাকার সুযোগ কম পায়। তাই কমে কোলন ক্যান্সারের আশঙ্কাও । এছাড়া হজম ক্ষমতাতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
কোলেস্টরল কমাতে: খাদ্যের সঙ্গে উপযুক্ত মাত্রায় ফাইবার থাকলে তা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। কারণ আমরা ফ্যাট জাতীয় যেসব খাদ্য খাই, ফাইবারের অনুপস্থিতিতে শরীর প্রায় তার সবটাই শোষণ করে নেয়। এরফলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির সুযোগ থাকে। অথচ ফাইবার থাকলে তা ফ্যাটজাতীয় উপাদানকে মলের সঙ্গে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে: শরীরে ফাইবারের মাত্রা বেশি হলে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়ে। ইসবগুল ঠিক এই কাজটিই করে। এছাড়া ইসবগুল খেলে বেশি মাত্রায় খাদ্য খাওয়াও রোধ হয়। তার ফলে ক্যালোরিও শরীরে বেশি ঢোকে না। ওজনও থাকে নিয়ন্ত্রণে। তাই ইনসুলিনের কাজ করতে সুবিধা হয়। ক্রমশ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে ডায়াবেটিস।
রক্তচাপ কমাতে: উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরলের সঙ্গতে। তাই উচ্চ রক্তচাপে ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে প্রতিদিন ইসবগুলও খান। ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল কমলে উচ্চরক্তচাপও সহজে নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ত্বক ও চুলের জন্য: পরিপাকতন্ত্রের গণ্ডগোলে ত্বক ও চুলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। কারণ পরিপাকতন্ত্র সঠিকভাবে খাদ্য উপাদান শোষণ করতে না পারলে আমাদের দেহতন্ত্র চুলের গোড়ায় ও ত্বকে প্রয়োজনীয় উপাদান পৌঁছে দিতে পারে না। ইসবগুল পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখে। ফলে ইসবগুল খাওয়ার সঙ্গে সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে ত্বক ও চুলে পুষ্টির জোগান স্বাভাবিক থাকে। চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
কী কী ভাবে খাওয়া যায় ইসবগুল
একগ্লাস ঠান্ডা জলে মিশিয়েও খেতে পারেন ইসবগুল। আবার ঈষদুষ্ণ জলে মিশিয়েও ইসবগুল খাওয়া যায়। এছাড়া দইয়ের সঙ্গে মিশিয়েও ইসবগুল সেবন উপকারে আসে। দইয়ের সঙ্গে ইসবগুল খেলে অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ে। খাদ্য হজম হয় দ্রুত। বিপাকক্রিয়ার হারও বাড়ে।
কারা খাবেন? কারা খাবেন না?
সকলেই ইসবগুল খেতে পারেন। তবে অনেকের পেট ফাঁপার সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তারপরেই ইসবগুল খান।