উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলা হয়। কখন যে উচ্চ রক্তচাপ নিঃশব্দে আপনার শরীরের একের পর এক অঙ্গকে ধীরে-ধীরে আঘাত করতে শুরু করে, তা বোঝাও যায় না। তবে সমস্যা তৈরি হয় রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার পর। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থেকে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। তাই হাইপারটেনশন নিয়ে সচেতন না হলেই মুশকিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র প্রকাশিত নতুন তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে ১৯ কোটি ভারতীয় হাইপারটেনশনে ভুগছেন। এই প্রথমবার হাইপারটেনশন নিয়ে WHO তাদের গ্লোবাল রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনেছে। সেই রিপোর্টে ভারতকে কেন্দ্র করে যে সব তথ্য সামনে এনেছে WHO, তাতে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ বাড়ারই কথা। ভারতের মতো দেশে যেখানে জনস্বাস্থ্য বা Public Health নিয়ে চর্চা-আলোচনা-সচেতনতা কম, সেখানে কী ভবিষ্যৎ এই হাইপারটেশনের?
WHO-র দাবি, ৩০-৭৯ বয়সী ব্যক্তিরা যদি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন, তাহলে ২০৪০ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ মিলিয়ন (৪ কোটি) মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। হাইপারটেনশনের জেরে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, হার্ট ফেলিওর, কিডনির সমস্যা, চোখের সমস্যা, মেটাবলিক সিন্ড্রোমের মতো সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে কিছু-কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা প্রাণঘাতী। তবে শুধুমাত্র রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেই আপনি এসব সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবেন।
রিপোর্ট প্রকাশের সময় হু-র ডিরেক্টর জেলারেল তেদ্রস আধানম ঘেব্রেয়েসুস বলেন, “উচ্চ রক্তচাপ প্রাণঘাতী। এমনকী কার্ডিওভাসকুলার রোগে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। আমি এই রোগের শিকার, তাই জানি এই হাইপারটেনশনের ভয়াবহতা। আমি ভাগ্যবান যে, আমি যথাযথ ওষুধ ও চিকিৎসাব্যবস্থার মধ্যে রয়েছি… দুর্ভাগ্যবশত, যাঁরা হাইপারটেনশনে আক্রান্ত তাঁদের সবার ক্ষেত্রে এমনটা হয় না, এটি এমন একটি রোগ যাকে নীরব ঘাতক বলা হয়।”
WHO-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯ কোটি ভারতীয় হাইপারটেনশনের রোগী হলেও মাত্র ৩৭% মানুষ এ বিষয়ে সচেতন। পাশাপাশি মাত্র ১৫% ভারতীয় রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখেন। এই তথ্যই আরও উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে, কারণ সচেতনতার অভাবের চিত্রটা একপ্রকার স্পষ্ট হয়ে যাক এখান থেকেই। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ভারতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাসকুলার রোগে ৫২% মানুষের মৃত্যুর পিছনে হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ দায়ী। সুতরাং, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে সচেতন না হলেই বিপদ। এ চিত্র শুধু ভারতের। বিশ্বজুড়েও হাইপারটেনশনে আক্রান্তের সংখ্যা নেহাত কম নয়।
বিশ্বজুড়ে ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে হাইপারটেনশন রোগীর সংখ্যা ৬৫০ মিলিয়ন থেকে বেড়ে হয়েছে ১.৩ বিলিয়ন। প্রতি ৩ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ১ জন ভুগছেন উচ্চ রক্তচাপে। তাঁদের মধ্যে মাত্র ৫৪% মানুষ এ বিষয়ে সচেতন, ৪২% মানুষ চিকিৎসাধীনে রয়েছেন এবং মাত্র ২১% মানুষ হাইপারটেনশনকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।