
মেল বুবস (Male Boobs) এই শব্দ আমাদের অনেকের কাছেই অত্যন্ত পরিচিত। বিশেষ যারা একটু স্থূল চেহারার অধিকারী হন তাঁরা অনেকেই এই শব্দটির সঙ্গে বিশেষভাবে পরিচিত। মেল বুবস বা পুরুষদের স্তন অর্থাৎ যেসব পুরুষের বক্ষযুগলের আয়োতন এবং আকার অনেকটা মহিলাদের মতোই। এই কারণে অনেক সময় বহু পুরুষকে বন্ধুদের নানা ঠাট্টা তামাশার পাত্র হয়ে উঠতে হয়। যা অনেক সময় কারও কারও মানসিক অবসাদের কারণ হয়ে ওঠে। সে সব অন্য কথা। এই প্রতিবেদনে বরং আমরা আলোচনা করব কেন পুরুষদের মধ্যে কারও কারও এই মেল বুবসের সমস্যা দেখা যায়? হ্যাঁ, সমস্যা বলছি কারণ এই বিষয়টি কিন্তু মোটেও স্বাভাবিক নয়। কেন হয় এই সমস্যা? কী ভাবে মুক্তি পেতে পারেন? বড় কোনও বিপদের লক্ষণ কিনা বুঝবেন কী করে?
সম্প্রতি মেল বুবস নিয়ে সমাজ মাধ্যমে নিজের পেজে একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন চিকিৎসক এস এ মল্লিক।
তিনি বলছেন, এটিকে বলে মেল ব্রেস্ট এনলার্জমেন্ট। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে গাইনোকোমাস্টিয়া। এই সমস্যার নেপথ্যে কোনও একটি কারণ দায়ী নয়। পিছনে থাকতে পারে একাধিক কারণ। যেমন ধরুন শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, কোনও বিশেষ ওষুধ খাওয়ার ফলে, বয়ঃসন্ধিকালে, কিংবা শিশুদের ক্ষেত্রে মায়ের শরীরে ইস্ট্রোজেন কম থাকলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসক বলেন, “পুরুষদের শরীরে কোনও কারণে ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ কমে গেলে এবং টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বেড়ে গেলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।”
ধরুন, মায়ের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কম। সেই ক্ষেত্রে সদ্যজাত শিশুর শরীরেও ওই ধারা বাহিত হতে পারে। ফলে শিশুর শরীরে ইস্ট্রোজেন এবং টেস্টোস্টেরন মাত্রায় ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। ফলে বুক ফুলে যেতে পারে। অনেক সময় বয়ঃসন্ধিকালে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আবার বিশেষ কিছু ওষুধ এই সমস্যার কারণ হতে পারে। গ্যসের ওষুধ, কেমোথেরাপি বা থাইরয়েড, লিভার বা কিডনির সমস্যার জন্য প্রযোজ্য বিভিন্ন ওষুধ এই রোগের কারণ হতে পারে।
মুক্তি পাবেন কী ভাবে?
চিকিৎসক জানাচ্ছেন মেল বুবসের সমস্যা অনেক সময় নিজে নিজেই সমাধান হয়ে যায়। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির সময়ে যাঁদের এই সমস্যা হয় তাঁদের ক্ষেত্রে নিজে নিজেই ৬ মাস অথবা এক বছর তা আবার ঠিক হয়ে যায় সেই ক্ষেত্রে চিন্তার কোনও কারণ নেই।
তবে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন যদি তা নাহয় সেই ক্ষেত্রে। যাঁদের দীর্ঘদিন ধরে ব্রেস্ট এনলার্জমেন্টের সমস্যা রয়েছে তাঁদের আর দেরী করা উচিত নয়। কিছু ওষুধ দিয়ে এই সমস্যার চিকিৎসা করা প্রয়োজন। অনেকের ক্ষেত্রে দুদিকে বুকে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এক ধরনের বৃদ্ধি লক্ষ করা যায়, তেমনটা যদি হয় তাহলে সতর্ক হন। অনেকে আবার এই ক্ষেত্রে ব্যথাও অনুভব করতে পারেন। তাঁদের অস্ত্রপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
ধরুন কোনও পুরুষের স্তন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং স্তনবৃন্ত থেকে কোনও ধরনের তরল নিসঃরণ হয়, তাহলে আরও দ্রুত সতর্ক হতে হবে। এই ক্ষেত্রে আর অপেক্ষা নয়। কিংবা ধরুন ব্যথা থাকছে, অনেকদিন চিন চিনে ব্যথা কিংবা বড় ব্রেস্ট হয়ে রয়েছে। অথবা হাত দিলে লাম্পসের মতো শক্ত কিছু অনুভূত হচ্ছে তাহলে একদম সময় নষ্ট না করে সোজা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মন রাখবেন এই বিষয়টি কিন্তু ব্রেস্ট ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। মনে রাখবেন ব্রেস্ট ক্যানসার কিন্তু পুরুষদেরও হতে পারে।
এই ক্ষেত্রে কিছু অভ্যাসও ত্যাগ করাটা প্রয়োজন। যেমন ধরুন কারও মদ্যপানের অভ্যাস রয়েছে। অ্যালকোহল এই ক্ষেত্রে খুব একটা ভাল নয়। মারিয়ানা, হেরোইনের মতো কোনও বস্তুর নেশা থাকে তাহলে তাও কিন্তু ব্রেস্ট এনলার্জমেন্টের কারণ হতে পারে। মনে রাখবেন এই সমস্যা আপাতদৃষ্টিতে খুব একটা বড় না মনে হলেও অসাবধানতার কারণে হতে পারে বড় বিপদ। তাই সাবধান!