
রক্তে শর্করা কমে যাওয়া বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত স্বাভাবিক। এমনটা ঘটলে শরীরে আনচান ভাব, মাথা ঘোড়ার মতো নানা সমস্যা দেখা যায়। অনেকেই হয়তো জানেন না, ডায়াবেটিস না থাকলেও হতে পারে এই সমস্যা। কমতে পারে রক্তে শর্করার পরিমাণ। কখনও কখনও এই সমস্যা কিন্তু গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি বয়ে আনে। কেন এমনটা হয়?
ডায়াবেটিস না থাকলেও হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে, যদিও তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়। জীবনযাত্রা, কোনও রকম অন্তর্নিহিত রোগ বা কিছু ক্ষেত্রে হরমোনের তারতম্যের প্রভাবে হতে পারে।
অগ্ন্যাশয় থেকে উৎপন্ন ইনসুলিন রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু যখন এই ভারসাম্য নষ্ট হয়, তখন ডায়াবেটিস না থাকলেও হঠাৎ রক্তে শর্করা নেমে যেতে পারে।
১. ওষুধ – অন্য কারও ডায়াবেটিসের ওষুধ ভুলবশত খেয়ে ফেলা, বা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ খাওয়ার ফলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। যেমন, ম্যালেরিয়ার ওষুধ কুইনাইন রক্তে শর্করা কমাতে পরিচিত। শিশু এবং কিডনির রোগীরা এতে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
২. অতিরিক্ত মদ্যপান – খালি পেটে অ্যালকোহল খেলে লিভার গ্লাইকোজেন থেকে জমা গ্লুকোজ ছাড়তে পারে না, ফলে রক্তে শর্করা বিপজ্জনকভাবে কমে যেতে পারে।
৩. গুরুতর অসুস্থতা – যেমন সিরোসিস বা হেপাটাইটিসের মতো উন্নত স্তরের লিভারের অসুখ, কিডনি বিকল হওয়া, গুরুতর সংক্রমণ বা হৃদরোগ গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। বিশেষ করে কিডনি বিকল হলে ওষুধ শরীর থেকে বের হতে পারে না, ফলে হঠাৎ রক্তে শর্করা পড়ে যেতে পারে।
৪. অনাহার এবং খাওয়াদাওয়ার সমস্যা – দীর্ঘ সময় উপোস থাকা, অনাহার বা অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা-র মতো ইটিং ডিসঅর্ডারে শরীরের গ্লাইকোজেনের ভাণ্ডার ফুরিয়ে যায়, যা বারবার হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণ হতে পারে।
৫. ইনসুলিনের অতিরিক্ত উৎপাদন – খুবই বিরল একটি টিউমার ইনসুলিনোমা, যা অগ্ন্যাশয় থেকে অতিরিক্ত ইনসুলিন তৈরি করায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। আবার কিছু টিউমার ইনসুলিনের মতো কার্যকরী পদার্থ উৎপন্ন করে, যার ফলেও একই সমস্যা দেখা দেয়।
৬. হরমোনের ঘাটতি – অ্যাড্রেনাল বা পিটুইটারি গ্রন্থির অসুখে গ্লুকোজ বিপাকে যুক্ত হরমোনের নিঃসরণ কমে যেতে পারে। যেমন—শিশুদের গ্রোথ হরমোন ঘাটতির কারণে বারবার হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।
যদিও হাইপোগ্লাইসেমিয়া ডায়াবেটিসের সঙ্গে বেশি জড়িত, তবুও ডায়াবেটিস না থাকা ব্যক্তিরাও এর বাইরে নন। হঠাৎ মাথা ঘোরা, ঘাম হওয়া বা বিভ্রান্তি তৈরি হলে এবং এর পেছনে কোনও স্পষ্ট কারণ না থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।