
পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে থাইরয়েডের সমস্যা বেশি। অন্তত এমনটাই দাবি জানাচ্ছে একাধিক সমীক্ষা। কিন্তু এমন পার্থক্য কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিশ্ব থাইরয়েড দিবসে যোগাযোগ করা হয় সিএমআরআই-এর এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ কল্যাণ কুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। চলুন দেখে নেওয়া যাক এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক কী বললেন।
থাইরয়েডের সাধারণ রোগ হল হাইপোথাইরয়েডিজম, হাইপারথাইরয়েডিজম, থাইরয়েডাইটিস ও থাইরয়েড ক্যানসার। তবে, বারবার গবেষণা ও সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে থাইরয়েড সংক্রান্ত সমস্যা বেশি। শুধু তা-ই নয়, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে থাইরয়েডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা পাঁচ থেকে আট গুণ বেশি। আর এর জন্য লিঙ্গ, হরমোন, জিন, ইমিউন সিস্টেম ও পরিবেশগত কারণ দায়ী।
হাইপারথাইরয়েডিজম ও হাইপোথাইরয়েডিজম দুটোই অটোইমিউন ডিজিজ। সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরে ইমিউন সিস্টেম প্রয়োজন। কিন্তু অনেক সময় এই ইমিউন সিস্টেম নিজেই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। একেই অটোইমিউনিটি বলা হয় এবং এর জেরে যে রোগের সৃষ্টি হয়, তা হল অটোইমিউন ডিজিজ। আর মহিলাদের মধ্যে এই অটোইমিউন রোগের সম্ভাবনা বেশি।
ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মতো পুরুষ হরমোনগুলো লিম্ফোসাইটের পরিপক্কতা ও কার্যকারিতার উপর প্রভাব ফেলে যা অটোইমিউন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত প্রধান কোষ। এর জেরে হাইপারথাইরয়েডিজম (অত্যধিক মাত্রায় থাইরয়েড ক্ষরণ হয়) এবং হাইপোথাইরয়েডিজম (দেহের চাহিদা অনুযায়ী থাইরয়েড ক্ষরণ হয় না) দেখা দেয়। হাইপারথাইরয়েডিজম মহিলাদের মধ্যে ১০ গুণ বেশি এবং হাইপোথাইরয়েডিজম মহিলাদের মধ্যে ৫-৮ গুণ বেশি। এছাড়া থাইরয়েডের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও মহিলাদের মধ্যে বেশি। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে থাইরয়েডের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২-৩ গুণ বেশি।
হাইপারথাইরয়েডিজম হোক হাইপোথাইরয়েডিজম, থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিলে আপনাকে ওষুধ খেতেই হবে। থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা শরীরের বিপাক ক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলে। এর জেরে হঠাৎ করে অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া কিংবা ওজন কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। এছাড়াও অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করা, ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা, চুল পড়া, ঋতুস্রাবের সমস্যা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।