একমাস ধরে ভীষণ মন খারাপ তিন্নির। মাঝেমধ্যে এমনই মেজাজ হারিয়ে ফেলছে যে সাধের ফোনটাকে ছুঁড়ে ফেলছে বিছানার একপ্রান্তে। কারও সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। বন্ধুদের হোয়্যাটসঅ্যাপ দেখলে বিরক্ত লাগছে। সাজগোজ, অফিস কিছু ভাল লাগছে না। কাজে মন বসছে না তিন্নির। কারণ, পাঁচ দিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের দারুণ একখানা ছবি আপলোড করেছে। আর সেই ছবিতে পাঁচদিনে ‘মাত্র’ ৫০০টি লাইকও পড়েনি! যা তিন্নির কাছে রীতিমতো যন্ত্রণার। নিজের কাজের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার (Social Media Influencer) হিসেবেও কাজ করে সে। তাই ফ্যাশন থেকে ফুড সবই তার নখদর্পণে। ইন্সটা থেকে ফেসবুক—ফলোয়ার্সের সংখ্যাও চোখধাঁধানো। তবুও কেন ওর পছন্দের ব্র্যান্ড থেকে কেনা নতুন এই ড্রেসটা ভার্চুয়াল জগতের (virtual world) বন্ধুরা পছন্দ করছে না, তাই নিয়ে ও চিন্তিত। তার থেকেও বেশি ডিপ্রেসড (depressed)। আর সেই হতাশা থেকেই সবার সঙ্গে ঝামেলা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত আসক্তি থেকে ডিপ্রেশন নতুন কোনও ঘটনা নয়। বরং বর্তমানে সমস্যা আরও বাড়ছে। ‘আমি ভাল নেই, আমি খারাপ আছি—অথচ ভাল থাকার রসদটুকু আমার মধ্যে রয়েছে’, এমন সমস্যা নিয়ে অনেকেই আসছেন, জানালেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুজিত সরখেল। তাঁর কথায়, ”সকলের মধ্যেই তুলনা (comparison) করার মানসিকতা অনেক বেশি। নিজের সব কিছু থাকা সত্ত্বেও অন্যের সঙ্গে তুলনা টানছেন। কেউ ভাল কিছু করলেই মনে হচ্ছে আমি একাই খারাপ আছি। আমার কিছু নেই। আমারই বোধহয় এত খারাপ জীবন কাটছে। এখান থেকেই আসছে ডিপ্রেশন। তাই আমি নিজে কী ভাবে ভাল থাক,ব তা বুঝতে পারাটাও ভীষণ ভাবে জরুরি। এই ‘তুলনামূলক’ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নইলে অজান্তেই যে কেউ হতে পারে ডিপ্রেশনের শিকার।”
রোজকার কর্মব্যস্ত জীবন থেকে কয়েকটা দিনের বিরতি সকলের জন্যই খুব জরুরি। জীবন এত বেশি ইন্টারনেট, মোবাইল নির্ভর হয়ে গিয়েছে, যে কোথাও গিয়ে হারিয়ে গিয়েছে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। ঘুম থেকে উঠে নোটিফিকেশনে (notification) প্রথম নজর না দিলেই শরীরের মধ্যে অদ্ভুত অস্বস্তি হয়। প্রতি মুহূর্তের আপডেট পাওয়াটাই যেন এখন জীবনের বিড়াম্বনা। আর তাই চল বেড়েছে ডিজিট্যাল ডিটক্সের (digital detox)। রোজকার এই একঘেয়ে মিটিং-চ্যাটিং থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই যোগ দিচ্ছেন এক সপ্তাহের ডিটক্স ক্যাম্পে। আর তাতে যে রাগ, দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণে থাকছে এমনটাও কিন্তু দেখা গিয়েছে বেশ কিছু সমীক্ষায়। স্মার্টফোন এবং ফোনে থাকা বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন বাড়াছে মানসিক চাপ। ১৮-৭২ সকলেই কিন্তু এই সমস্যার শিকার। সমীক্ষায় উঠে এসেছে প্রাপ্তবয়স্করা দিনের মধ্যে ৯ ঘন্টা ব্যস্ত থাকেন সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে। যাঁরা এই এক সপ্তাহ ডিজিটাল ডিক্সিফিকেশনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে গবেষকরা দেখেছেন উদ্বেগ কম।
ডাঃ সরখেল আরও জানান, শুধুমাত্র এক সপ্তাহের জন্য নয়, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে সীমারেখা টানতে হবে। আর এই অভ্যাস রপ্ত করতে হবে নিজেকেই। তবে তাঁর মতে, সোশ্যাল মিডিয়া মানেই খারাপ নয়। যাঁরা ডিপ্রেশন ভুগছেন এমন মানুষদেরও নির্দিষ্ট কিছু গ্রুপ থাকে। যেখান থেকে তাঁরা একে অপরকে উৎসাহ দেন এগিয়ে আসতে। এমনকী ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতেও ভূমিকা রয়েছে এই সব গ্রুপের।