নয়া দিল্লি: দেশজুড়ে সক্রিয় মানব পাচার চক্র (Human Trafficking)। অনুপ্রবেশের তদন্তে নেমেই জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গিয়েছে, ওপার বাংলা থেকে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশীদেরই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। বুধবারই মানব পাচার চক্রের হদিস পেতে দেশজুড়ে তল্লাশি অভিযান শুরু করে এনআইএ (NIA)। ১০ রাজ্যের একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে মোট ৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাংলা থেকেই গ্রেফতার ৩।
বুধবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছিল এনআইএ-র অভিযান। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অসম, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানা, হরিয়ানা, রাজস্থান, জম্মু-কাশ্মীর ও পুদুচেরির মোট ৫৫টি জায়গায় দিনভর তল্লাশি চালানো হয়। ওই অভিযানেই মোট ৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে অধিকাংশই মানব পাচারে ‘মিডলম্যান’ হিসাবে কাজ করত। মূলত বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদেরই এ দেশে অনুপ্রবেশে সাহায্য করা হত। এরপর এদের ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে নকল পরিচয় বসবাস করতেও সাহায্য করত অভিযুক্তরা। এনআইএ-র তরফে অনুপ্রবেশ চক্রের তদন্তও শুরু করা হয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের পাচারের সঙ্গে যুক্তদের চিহ্নিত করতে বাংলাদেশের কাছ থেকেও সাহায্য় চাওয়া হবে বলে সূত্রের খবর।
এনআইএ-র তরফে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “১০ রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলজুড়ে চলা মানব পাচার চক্রের বিরুদ্ধে বড় সাফল্য। বিএসএফ ও রাজ্য পুলিশের সহযোগিতায় এনআইএ বুধবার সকালে দেশজুড়ে নানা জায়গায় অভিযান চালায়। এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে অনুপ্রবেশ ও বেআইনি মানব পাচার রোখা।”
বুধবারের এনআইএ অভিযানে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৩ জন, ত্রিপুরা থেকে ২১ জন, কর্নাটক থেকে ১০ জন, অসম থেকে ৫ জন, তামিলনাড়ু থেকে ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া তেলঙ্গানা, পুদুচেরি ও হরিয়ানা থেকেও ১ জন করে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে নকল আধার কার্ড ও প্যান কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। নগদ ২০ লক্ষ টাকা ও ৪৫৫০ মার্কিন ডলারও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অসম পুলিশ এই মানব পাচার র্যাকেটের খোঁজ পায়। এরপরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের তদন্তভার গ্রহণ করে এনআইএ। গতকালের অভিযানের পর এনআইএ-র তরফে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এনআইএ-র দাবি, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, রাজস্থান, হরিয়ানা থেকে জম্মু-কাশ্মীর অবধি বেআইনি মানব পাচার চক্রের নেটওয়ার্ক ছড়িয়েছিল। বিভিন্ন মডিউল কাজ করছিল এই রাজ্যগুলি থেকে।।
অন্যদিকে, অসম পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে ত্রিপুরা থেকে আগত একটি ট্রেনে একদল রোহিঙ্গাকে দেখতে পেয়েই আটক করে করিমগঞ্জ পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই মানব পাচার চক্রের খোঁজ মেলে। এখনও অবধি ৪৫০ জন রোহিঙ্গাকে অনুপ্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সহায়তায়।