মীরাট: দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে দুষ্কৃতীর গুলি খেতে হয়েছিল। ১০০ কোটি টাকার স্কলারশিপ দুর্নীতি সামনে এনেছিলেন তিনি। সে সময় মাফিয়াদের ছোড়া ৭টি গুলি লাগে তাঁর শরীরে। সেই গুলিতে একটি চোখ গিয়েছে। একটি কানে শুনতে পান না। মুখের গঠনও গিয়েছে বদলে। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েনি। পিসিএস অফিসার থাকার সময় এই অবস্থা হয়েছিল তাঁর। তার পর মনে জেদ ধরেন, আরও বড় অফিসার হতে হবে। তাই ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেই স্বপ্ন পূরণ হল এ বছর। রিঙ্কু রাহি নামের এই ব্যক্তি ইউপিএসসি-তে ৬৮৩ ক্রমিকে না উঠেছে তাঁর। এই ফলে উচ্ছ্বসিত রিঙ্কু নতুন করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
২০০৭ সালের প্রভিশনার সিভিল সার্ভিস (পিসিএস) অফিসার হয়েছিলেন রিঙ্কু। ২০০৮ সালে মুজফ্ফরনগরে সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অফিসার হিসাবে পোস্টিং পান। তার পরই ১০০ কোটি টাকার স্কলারশিপ দুর্নীতির পর্দা ফাঁস করেছিলেন তিনি। ২০০৯ সালের মার্চে মাফিয়ারা আক্রমণ করে তাঁকে। ৭টি গুলি লেগেছিল তাঁর গায়ে। এর মধ্যে তিনটি গুলি লাগে মুখে। যদিও সে যাত্রায় প্রাণ বেঁচেছিল তাঁর। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, এর পর সরকারি সাহায্য তো পাননি, উল্টে বিভিন্ন সরকারের থেকেই অসহযোগিতা পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে রিঙ্কু বলেছেন, “আমার উপর আক্রমণের অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৪ জনের ১০ বছরের জেল হয়েছে। বাকিরা ছাড়া পেয়ে গিয়েছে। মায়াবতীর সরকারের আমলে আমাকে গুলি করা হয়েছিল। কিন্তু সমাজবাদী পার্টির সরকার এসেও পরিস্থিতির বদল হয়নি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুর চড়ানোয় সপা-র রাজত্বকালে আমাকে সাইক্রিয়াটির ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছিল। গুলিতে আহত হওয়ার যে কয়েক মাস আমি হাসপাতালে ছিলাম, সে সময়ের ছুটি এখনও মঞ্জুর করা হয়নি। আমার মনে হয়, আমি সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়াই করি না। সিস্টেম আমার বিরুদ্ধে লড়াই করে।”
খুব কষ্ট করে লেখাপড়া শিখেছেন বলেও জানিয়েছেন ইউপিএসসি পাশ করা রিঙ্কু। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বাবার বয়স যখন ১০ বছর তখন দাদু মারা যায়। ঠাকুমাকে তখন শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। রাস্তায় রাস্তায় কাজ করে তাঁর বাবাকে মানুষ করেছিলেন ঠাকুমা। অভাবের জন্য বাবা পড়াশোনা করতে পারেননি। ছোট থেকে এই গল্প শুনে তিনি বড় হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এ গুলোই তাঁর মনে আগুন জ্বালিয়েছে বড় কিছু হওয়ার জন্য। সেই লড়াই এখনও জারি আছে বলে জানিয়েছেন রিঙ্কু।