
সিমলা: সিমলার ভেঙে পড়া শিব মন্দিরের ধ্বংসস্তূপ থেকে বৃহস্পতিবার (১৭ অগস্ট) উদ্ধার করা হয়েছে আরও একটি দেহ। চাম্বা জেলাতেও বৃষ্টি সংক্রান্ত কারণে মৃত্যু হয়েছে আরও দুজনের। ফলে, হিমাচল প্রদেশে গত কয়েকদিনে বৃষ্টির জেরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭৪-এ। গত কয়েকদিনে, সিমলা শহরাঞ্চলেই তিন-তিনটি বড় মাপের ধস নেমেছে। যার জেরে মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। বস্তুত, চলতি বছরে বর্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে গত ৫৫ দিনে উত্তরের এই পাহাড়ি রাজ্যে মোট ১১৩টি বড় মাপের ধস নেমেছে। যার জেরে পিব্লুডি বিভাগের ২,৪৯১ কোটি টাকা এবং ভারতের জাতীয় মহাসড়ক কর্তৃপক্ষের প্রায় ১০০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার, সিমলার সামার হিল এলাকায় ফের একটি ধস নামে। যার ফলে, রেললাইনের একটি অংশ ভেসে গিয়েছে। বাতাসে ঝুলছে রেলের লাইন।
তবে, এখনই নিশ্চিন্ত হওয়ার উপায় নেই হিমাচলের। সিমলা, সোলান, মান্ডি, চাম্বা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে শুক্রবারও বিচ্ছিন্নভাবে ভারী বৃষ্টিপাত এবং বজ্রগর্ভ মেঘ-সহ মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ। গত রবিবার থেকে হিমাচলে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছিল। টানা তিন দিন ধরে নাগাড়ে বর্ষণের পর, মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টির দাপট কিছুটা কমেছে। বৃহস্পতিবারও রাজ্যের কিছু কিছু জায়গায় হালকা বৃষ্টি হয়েছে। ২৪ জুন থেকে রাজ্যে বর্ষা শুরু হয়েছিল। তারপর থেকে বৃষ্টি-বন্যা-ধসের জেরে অন্তত ২১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও অনেকে নিখোঁজ।
#WATCH | Himachal Pradesh: NDRF teams continue search & rescue operations at the landslide-affected area of Shimla. (17.08) pic.twitter.com/a6tsFWpCyb
— ANI (@ANI) August 17, 2023
এদিকে বিধ্বংসী বৃষ্টিপাতে গত সোমবার সিমলার সামার হিল এলাকায় একটি শিবমন্দির ভেঙে পড়েছিল। মন্দিরের তলায় চাপা পড়েছলেন একটি গোটা পরিবার। ওই পরিবারের মোট সাতজনের মৃত্যু হয়েছ। হারিয়ে গিয়েছে তিন-তিনটি প্রজন্ম। বৃহস্পতিবার, পরিবারের সাত সদস্যের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। পরিবারের এক সদস্য বলেছেন, “আমার ভাই, তিন সন্তান, ভগ্নিপতি, আমাদের পরিবারের আরেক মেয়ে – সকলের মৃত্যু হয়েছেন। উদ্ধারকারীরা মৃতদেহ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। আমি অন্তত তাদের শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে চাই, আমার ভাইয়েরও শেষকৃত্য করতে চাই।”
এদিকে, হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু উপদ্রুত অঞ্চলগুলি পরিদর্শনের পর জানিয়েছেন, রাজ্যের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। সাম্প্রতিক ভূমিধসের ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়েছে পরিকাঠামোর। সেগুলির পুনর্নির্মাণের চ্যালেঞ্জ ‘পাহাড় প্রমাণ’। হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকাও পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজ্য জুড়ে আনুমানিক ১০,০০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ি এই রাজ্যের অর্থনীতি মূলত পর্যটন এবং আপেল ব্যবসার নির্ভর। এই দুই ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হোটেল এবং গেস্ট হাউসে লোক নেই, পর্যটকদের অভাবে রোজগার নেই ট্যাক্সিচালকদেরও। পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পরিবেশগতভাবে হিমালয় ভঙ্গুর। সেখানে, অবৈজ্ঞানিক উপায়ে নির্মাণ হয়েছে। বনভূমি কেটে কেটে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। অবৈজ্ঞানিক নির্মাণের ফলে মাটি নীচে জলপ্রবাহ বাধা পাচ্ছে। এর ফলে ঘন ঘন ধস নামছে।