নয়া দিল্লি: গুরুতর রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায়, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়েই গুলি খেতে হবে – কেউ কখনও কল্পনা করতে পারে? রবিবার (১৪ জুলাই) দুপুরে, এই কল্পনাতীত ঘটনাই ঘটেছে নয়া দিল্লির গুরু তেগ বাহাদুর হাসপাতালে। জিটিবি হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডের ভিতরেই গুলি করে হত্যা করা হল এক ৩২ বছরের যুবককে। নিহত যুবকের নাম রিয়াজউদ্দিন। কে বা কারা তাকে এই ভাবে হত্যা করল, কেন হত্যা করল – এই সকল প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এদিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জিটিবি হাসপাতালের রোগী, রোগীর বাড়ির লোকজন, চিকিৎসক ও অন্যান্য চিকিৎসাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
জানা গিয়েছে, গত ২৩ জুন জিটিবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল রিয়াজউদ্দিনকে। পেটে সংক্রমণের জন্য তাঁর চিকিৎসা চলছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ঘটেছে। তারা জানিয়েছে, বন্দুকধারী একজনই ছিল। হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে সে রিয়াজুদ্দিনকে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও রিয়াজউদ্দিন বেঁচে ছিলেন। পরে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এদিন বিকেল ৪টে নাগাদ এই ঘটনা ঘটে। আততায়ীর বয়স ১৮-১৯ বছর বলে জানা গিয়েছে। একেবারে কাছ থেকে ৪-৫ রাউন্ড গুলি ছুড়েই সে পালিয়ে যায়। হাসপাতালের এক সাফাই কর্মী জানিয়েছেন, গুলির শব্দ হওয়া পরই হাসপাতালে হইচই পড়ে গিয়েছিল। চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তির পরিবেশ তৈরি হয়। এরই মধ্যে একজন ডাক্তার রিয়াজউদ্দিনের ক্ষতে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়েছিলেন, তবে তাতে লাভ হয়নি।
শাহদরার পুলিশের ডেপুটি কমিশনার, সুরেন্দ্র চৌধুরী জানিয়েছেন, জিটিবি এনক্লেভ থানায় ফোন করে এই ঘটনার রিপোর্ট করা হয়৷ পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে তারা দেখেছিল, রিয়াজউদ্দিন নামে এক রোগী আহত হয়েছেন। পরে তাঁর মৃত্যু হয়।” ডিসিপি বলেছেন, “ওই অপরাধীকে ধরতে পুলিশের একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে, মনে হচ্ছে ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরেই খুন করা হয়েছে।” অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার, বিষ্ণু কুমার শর্মা জানিয়েছেন, আততায়ীকে সনাক্ত করতে তাঁরা সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন। ঘটনাস্থলের যে ছবি ও ভিডিয়োগুলি ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাতে দেখা যাচ্ছে হাসপাতালের বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন রিয়াজুদ্দিন। একটি গোলাপী কম্বলে তাঁর কোমর নীচ থেকে ঢাকা।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, নিহত রিয়াজউদ্দিন, দিল্লির খাজুরি এলাকার বাসিন্দা। পেটে সংক্রমণের কারণে রিয়াজউদ্দিনকে ২৩ জুন জিটিবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। প্রাক্তন সেনাকর্মী ইসলামউদ্দিনের ছেলে সে।
এদিকে, দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ জানিয়েছেন, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে দিল্লির সবকটি হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করবে সরকার। তিনি বলেন, “কোনও অবহেলা সহ্য করা হবে না। দোষীদের রেহাই দেওয়া হবে না। সমস্ত হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্খা পর্যালোচনা করা হবে।”