AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

পরমাণু যুদ্ধের দোরগোড়ায় ভারত-পাকিস্তান? অগ্নি-৫ বনাম শাহিন ৩-র লড়াইয়ে জিতবে কে?

কত বোমা রয়েছে ভারতের, পাকিস্তানের কাছেই বা কত রয়েছে? কেন উঠছে পরমাণু হামলার কথা? ২০২৫-এর রিপোর্টে কার দিকে পাল্লা ভারী নিউক্লিয়ার ওয়াহেডের? পাকিস্তান হামলা চালালে হলে ভারত কি পারবে পাল্টা প্রত্যাঘাত করতে?

পরমাণু যুদ্ধের দোরগোড়ায় ভারত-পাকিস্তান? অগ্নি-৫ বনাম শাহিন ৩-র লড়াইয়ে জিতবে কে?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 26, 2025 | 9:37 PM

পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার পর প্রত্যাঘাতের আশঙ্কায় কাঁপছে করাচি। পাক প্রধানমন্ত্রী ও আইএসআই প্রধান ভালমতোই জানেন, ভারত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালালে বেঁচে পালানোর পথ থাকবে না। একে পাকিস্তান ছেড়ে বিদেশে নিরাপদ আশ্রয়ে সপরিবারে পালাচ্ছেন পাক সেনাকর্তারা। সূত্রের খবর, পাক সেনা প্রধান জেনারেল আসিম মুনির-সহ অন্যান্য শীর্ষ পাক সেনাকর্তারা তাঁদের পরিবারকে ব্রিটেন, আমেরিকার মতো দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আর এই অবস্থায় সবচেয়ে আলোচিত প্রসঙ্গ হল, দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ কি এবার সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে নামতে চলেছে? যদি যুদ্ধ হয়, তাহলে কি প্রথাগত পদ্ধতিতে হবে? নাকি পাকিস্তান পরমাণু হামলা চালাবে? যদি চালায়, ভারত কি সফলভাবে প্রত্যাঘাত করতে পারবে?

কোনওরম ভণিতা ছাড়া আসল প্রসঙ্গে আসা যাক। ভারতের নিউক্লিয়ার পলিসি, প্রথমে হামলা নয়। কিন্তু পাকিস্তানের তেমন কোনও নীতি নেই। তার উপর পাক প্রধানমন্ত্রী ও আইএসআই কর্তারা ভালমতোই জানেন, ভারতীয় সেনার শক্তির কাছে পাক সেনা নেহাতই শিশু। পদাতিক বাহিনী থেকে শুরু করে বায়ুসেনা, রণতরী থেকে শুরু করে গুলি বা কামান– ভারতের ভাঁড়ারে যত আছে, পাকিস্তানের তার সিকিভাগও নেই। আর ঠিক এই সময়েই আচমকাই উঠে এসেছে ১৯৮১-র এক গোপন মার্কিন গোয়েন্দাদের নথি। দিন দুয়েক আগে ফাঁস হওয়া সিআইএ-এর গোপন নথিতে আশঙ্কা করা হয়েছে, ১৯৯০ থেকে ক্রমশ বেড়ে চলা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অশান্তির প্রেক্ষিতে মার্কিন গোয়েন্দারা শুরুর দিন থেকেই পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। ১৯৯৩-এর ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স এস্টিমেট (NIE) রিপোর্টে প্রকাশ, দুই দেশের মধ্যে কোনও একপক্ষের ভুল পদক্ষেপের ফল হতে পারে পরমাণু যুদ্ধ! নথিতে আরও বলা হয়েছে, নব্বইয়ের দশক থেকেই পাকিস্তানের পরমাণু শক্তি বৃদ্ধির প্রতি ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ নীতি নেয় ভারত। অর্থাৎ মার্কিন গোয়েন্দারা বহু আগেই আঁচ করেছেন, ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে যে কোনও সময়ে যুদ্ধ হলে ২০% ক্ষেত্রে পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা সেই সময় থেকেই রয়েছে।

এবার সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে দেখা যাক, দুই দেশের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ বাঁধলে কে এগিয়ে থাকবে!

২০২৫-এর ফেডারেশন অফ আমেরিকান সায়েন্টিস্ট (FAS)-এর স্টেটাস অফ ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ২০২৫-এর তথ্য বলছে, ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময় থেকেই বিশ্বের দুই মহাশক্তিধর দেশ আমেরিকা ও রাশিয়া বিশ্বের মোট পরমাণু বোমার ৮৮% নিজেদের দখলে রেখে। যার মধ্যে ৮৪% এই মুহূর্তে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। সেই তালিকা মোতাবেক, পরমাণু বোমা মজুতের নিরিখে বিশ্বে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে ভারত, সপ্তমে পাকিস্তান। ভারতের কাছে রয়েছে ১৮০টি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড, পাকিস্তানের কাছে ১৭০টি। কিন্তু এ তো গেল বোমা মজুতের হিসাব। পরমাণু বোমা হামলা চালাতে লাগে বাহন বা কেরিয়ার। সেটা যুদ্ধজাহাজ হতে পারে, বা যুদ্ধবিমান হতে পারে। দুই দেশের মধ্যে তারও একটা তুল্যমূল্য বিচার করা যাক।

পরমাণু যুদ্ধ হলে ভারতের তুরুপের তাস অগ্নি-৫ মিসাইল। পাকিস্তান ও চিনের কাছ থেকে লাগাতার হুমকি-হুঁশিয়ারি রুখতে ভারত এই মিসাইলে নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড চাপানোর দক্ষতা অর্জন করেছে। ৮০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে এই মিসাইল, যার হামলা চালানোর ক্ষমতা রয়েছে শুধু চিন বা পাকিস্তানেই নয়, সুদূর ইউরোপেও। পাল্লার দিক থেকে অগ্নি-৫ ভারতের সবচেয়ে আধুনিক ও খতরনাক মিসাইল।

পাকিস্তানের কাছে অগ্নি-৫ এর জবাব দেওয়ার মতো কোনও দূরপাল্লার মিসাইল নেই। তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী মিসাইল শাহিন-৩। যার পাল্লা মাত্র ২৫০০ কিলোমিটার। খাতায় কলমে দেখলে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যতটা দূরত্ব, সেক্ষেত্রে ভারতের মূল ভূখণ্ডে তো বটেই, এমনকী আন্দামান ও নিকোবরেও এই মিসাইল আছড়ে পড়তে পারে। কিন্তু শাহিন-৩ কে রুখে দেওয়ার মতোও মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমও রয়েছে ভারতের। এস-৪০০ বা পৃথ্বী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম যে কোনও দূরত্ব থেকে আসা পাক পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রকে রুখে দিতে পারে। কিন্তু ভারতের অগ্নি-৫ কে রুখে দিতে পারে এমন কোনও ডিফেন্স সিস্টেম পাকিস্তানের কাছে নেই। পাকিস্তানের সর্বাধুনিক ডিফেন্স সিস্টেম চিনের দেওয়া এইচ কিউ-৯ -এর দক্ষতা নেই অগ্নি-৫ কে আটকানোর।

এবার গতির নিরিখে দেখা যাক। অগ্নি-৫ শব্দের চেয়ে অন্তত ২৪ গুণ বেশি গতিতে ধেয়ে যেতে পারে। ঘণ্টায় ২৯,৪০০ কিলোমিটার গতিবেগ। তুলনায় শাহিন-৩ শব্দের চেয়ে মাত্র ১৫ গুণ গতিতে সর্বোচ্চ ছুটে যেতে পারে। তাও ভারতের রেডারে ধরা পড়বেই।

হামলার দক্ষতার নিরিখেও অনেক এগিয়ে অগ্নি-৫। ভারতের এই ব্যালিস্টিক মিসাইল মাত্র ১০ মিটার সার্কুলার এরর প্রবাবল(CEP)-এ হামলা চালাতে পারে। মানে, টার্গেটের বাইরে অন্যান্য কোনও জায়গার ক্ষতি হবে না এতটাই নিখুঁত অগ্নি-র নিশানা। অন্যদিকে, শাহিন-৩ যেখানে ছুঁড়বে, তার আশেপাশের অন্তত ২৫০-৩০০ মিটার জায়গাতেও তার প্রভাব পড়বে। অর্থাৎ, কোনও একটি বিল্ডিংকে ধ্বংস করতে শাহিন-৩ ব্যর্থ হলেও অগ্নি-৫ সেক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য। অন্যদিকে, শাহিন-৩ একবারে একটির বেশি শহরকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু একটি অগ্নি-৫ একবারে গোটা পাকিস্তানকে স্রেফ ছাইয়ে পরিণত করতে পারে। এক হামলায় করাচি ও ইসলামাবাদকে একসঙ্গে টার্গেট করতে পারে।

নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহনেও অনেক এগিয়ে অগ্নি-৫। এক একটি অগ্নি মিসাইল ১৫০০ কিলোগ্রামের পরমাণু বোমা বয়ে উড়তে পারে। তুলনায় শাহিন-৩ মাত্র ৭০০ কিলোগ্রামের বোমা বহন করতে পারে।

এই সব দিক দেখেশুনে, প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরমাণু যুদ্ধে পাকিস্তানের শাহিন-৩ যদি স্রেফ একটি ছোট ছুরির সমান হয়, তাহলে ভারতের অগ্নি-৫ একটি বড় হাতুড়ি। ছুরির আঘাতে ভারতের সামান্য কেটে যেতে পারে, রক্তপাত হতে পারে! কিন্তু ভারতের এক হাতুড়ির ঘায়ে আস্ত পাকিস্তান চুরমার হয়ে যাবে।