লখনউ: ছোটবেলা থেকেই অবিচ্ছেদ্য বন্ধু ছিলেন তাঁরা। এক স্কুলে পড়াশোনা করতেন, একসঙ্গে গানবাজনা করতেন, এমনকি বিয়েও করেছিলেন একই দিনে। কিন্তু, বন্ধুকে কেড়ে নিল কর্কট রোগ। সেটাই মানতে পারেননি ৪২ বছরের আনন্দ গৌরব রাজপুত। বন্ধুর চিতাতেই ঝাঁপ মেরেছিলেন তিনি। শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল, পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁরও। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের আগ্রায়। ফিরোজাবাদের সহকারি পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, শনিবার সকালেই মৃত্যু হয়েছিল ক্যানসার আক্রান্ত অশোক কুমার লোধির। ওই দিন সন্ধ্যায় যমুনা নদের তীরে তাঁর শেষকৃত্যের আয়োজন করা হয়েছিল। অন্যান্যদের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু আনন্দ গৌরব রাজপুতও। প্রথম থেকেই আঝোরে কাঁদছিলেন তিনি। যখন একে একে মানুষ শ্মশান ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন, সেই সময়ই ‘বন্ধু আমি আসছি’ বলে চিৎকার করে অশোকের চিতায় ঝাঁপ মেরেছিলেন আনন্দ। আগুন থেকে সরিয়ে আনার আগেই গুরুতর জখম হয়েছিলেন তিনি। প্রথমে আগ্রার জেলা হাসপাতাল এবং তারপর এসএন মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু, বাঁচানো যায়নি।
আনন্দ রাজপুতের দাদা কমল সিং জানিয়েছেন, একেবারে ছোট থেকেই গলায় গলায় বন্ধু ছিলেন আনন্দ এবং অশোক। অশোক ঢোলক বাজাতেন, সঙ্গে মঞ্জিরা নিয়ে সঙ্গত করতেন আনন্দ। অনেকেই সামাজিক অনুষ্ঠানে গান-বাজনার জন্য ডাক পড়ত তাঁদের। গোটা গ্রামের মানুষও এই দুই ব্যক্তির বন্ধুত্ব সম্পর্কে জানত। মাঝে মাঝেই তাঁদের মাঠে বসে বাজনা বাজাতে দেখা যেত। এমনকি, সেখানেই তাঁরা একসঙ্গে দুপুরের খাওয়া সারতেন। দুজনেই খুব নম্র স্বভাবের ছিলেন বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা।
কিন্তু, বছর দুয়েক আগে অশোক লোধির ক্যানসার ধরা পড়েছিল। পাঁচ কন্যার বাবা আনন্দ অশোকের চিকিৎসার খরচের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার আগেই আনন্দের মেয়ের বিয়েতে খরচ করেছিলেন অশোকও। তাই, হঠাৎ করেই বন্ধুর চলে যাওয়াটা মন থেকে একেবারেই মেনে নিতে পারেননি আনন্দ। অশোকের দুই ছেলে রয়েছে। অশোক এবং আনন্দের ছেলে-মেয়েরাও একই স্কুলে পড়াশোনা করেছে।
নাগলা খাঙ্গারের এসএইচও মহেশ সিং জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ আনন্দের মৃত্যু আত্মহত্যা বলেই মনে করছে। শৈশবের বন্ধুর হঠাৎ মৃত্যুর শোক সামলাতে না পেরেই আনন্দ এই পথ বেছে নিয়েছেন বলে মনে করছে পুলিশ। এই ঘটনার বিষয়ে কোনও অভিযোগও জমা পড়েনি।