আগ্রা: শোনা যায়, একসময় রাজ্যবাসী কেমন আছে, তা সচক্ষে দেখতে এবং সকর্ণে শুনতে, রাজারা সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশে নগর পরিদর্শনে বের হতেন। অনেকটা সেই রকমভাবেই, উর্দি ছাড়া একেবারে সাধারণ পোশাকে, পর্যটকের ছদ্মবেশে, রাতের শহরে রাস্তায় নামলেন এক পদস্থ মহিলা পুলিশ কর্তা। উদ্দেশ্য, শহরে মহিলাদের নিরাপত্তা পরীক্ষা করা। গভীর রাতে অটোতেও চড়লেন সহকারী পুলিশ কমিশনার সুকন্যা শর্মা। মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, আছে জরুরি প্রতিক্রিয়া সহায়তার একটি ফোন নম্বর। ১১২-তে ফোন করলেই সঙ্গে সঙ্গে সহায়তা পাওয়ার কথা। পর্যটকের বেশে সেই নম্বরেও ফোন করলেন এই পদস্থ মহিলা পুলিশ কর্তা। উত্তর প্রদেশের আগ্রা শহরের ঘটনা। কী অভিজ্ঞতা হল তাঁর?
বিখ্যাত তাজমহল এই শহরে অবস্থিত। কাজেই বছরভর পর্যটকের অভাব হয় না। সম্প্রতি, এমনই এক সাধারণ পর্যটকের ছদ্মবেশে, রাত্রিবেলা আগ্রা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনের বাইরে অবতীর্ণ হয়েছিলেন ৩৩ বছর বয়সী এই মহিলা পুলিশ অফিসার। সেখান থেকে তিনি ১১২ নম্বরে ফোন করেন। পুলিশকে তিনি বলেন, এই গভীর রাতে রাস্তাঘাট একেবারে নির্জন। এই অবস্থায় তিনি রাস্তার চলাফেরা করতে ভয় পাচ্ছেন। তাই তাঁর পুলিশের সাহায্য প্রয়োজন। জানা গিয়েছে, হেল্পলাইন অপারেটর সুকন্যা শর্মাকে নিরাপদ স্থানে দাঁড়াতে বলেছিলেন। তিনি ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন, সেই সম্পর্কে বিশদ তথ্য নিয়ে নেন তিনি। একটু পরেই এক মহিলা টহলদারী দল, তাঁকে ফোন করেছিল। তারা জানায়, সুকন্যা যেন সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকেন। তারা তাঁকে নিতে আসছে।
এই ব্যবস্থার কার্যকারিতায় সন্তুষ্ট হয়ে সুকন্যা শর্মা সেই সময় ওই মহিলা টহলদারী দলকে তাঁর আসল পরিচয় জানান। তিনি জানান, জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা কেমন কাজ করছে, তা পরীক্ষা করছিলেন তিনি। সেই পরীক্ষায় তারা পাশ করেছে। এখানেই থামেননি সুকন্যা। এরপর তিনি, রাতের আগ্রায় মহিলারা কতটা সুরক্ষিত, তা যাচাই করতে একটি অটোরিক্সায় চড়েন। চালককে তিনি জানান, কোথায় নামবেন। চালক তাঁকে ভাড়া জানায়। তারপর মহিলা পুলিশ কর্তা অটোরিক্সায় ওঠেন। অটোচালককে নিজের পরিচয় না জানিয়ে, তার সঙ্গে আগ্রায় মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। অটোচালক তাঁকে জানায়, পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁর পরিচয় ইত্যাদি যাচাই করা হয়েছে। শিগগিরই তাকে অটোচালকের ইউনিফর্ম দেওয়া হবে। সেটা থাকলে, মহিলারা নিরাপত্তার আশ্বাস পাবেন। সুকন্যা শর্মাকে অটোচালক তাঁর গন্তব্যে নামিয়ে দেয়।
এসিপি সুকন্যা শর্মার এই অনন্য উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন মহিলা অধিকার কর্মী দীপিকা নারায়ণ ভরদ্বাজ। তাঁর মতে, মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এটাই সঠিক পদক্ষেপ। তিনি বলেছেন, “প্রতিটি শহরে পুলিশদের এটা করা উচিত। রাতের শহরে সাধারণ মানুষ কী কী সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, সেটা সাধারণ মানুষের বেশে নিজেরাই অনুভব করুন। সুকন্যা শর্মার খুব ভাল কাজ করেছেন।”