
নয়া দিল্লি: বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রী যদি স্বাধীন-স্বাবলম্বী হন এবং নিজের ভরণপোষণের ক্ষমতা রাখেন, তাহলে খোরপোশ দাবি করতে পারেন না। সম্প্রতি এক বিবাহ বিচ্ছেদ মামলায় এমনটাই পর্যবেক্ষণ রাখল দিল্লি হাইকোর্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণ, সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্যই খোরপোশের ব্যবস্থা করা হয়। দুইজন সক্ষম ব্যক্তির মধ্যে এটা ধনী হওয়া বা আর্থিক অবস্থা এক করার অস্ত্র হতে পারে না।
বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছিল স্বামী-স্ত্রীর। স্বামী আইনজীবী। স্ত্রী ভারতীয় রেলওয়ের ট্রাফিক সার্ভিসের গ্রুপ এ অফিসার। ২০১০ সালে তাদের বিয়ে হয়েছিল, কিন্তু ১৪ মাসের মধ্যেই বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সেই সময় স্বামী তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনেছিলেন। স্ত্রী যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে স্বামীর বিরুদ্ধেই অত্যাচারের অভিযোগ করেন। ২০২৩ সালে তাদের বিচ্ছেদ মঞ্জুর করে পারিবারিক আদালত। সেই সময় স্ত্রী ৫০ লক্ষ টাকা খোরপোশ দাবি করেছিলেন, কিন্তু আদালত তা খারিক করে দেয়। পরে খোরপোশের জন্য হাইকোর্টে মামলা করেন স্ত্রী।
দিল্লি হাইকোর্টে বিচারপতি অনিল ক্ষেত্রপাল ও বিচারপতি হরিশ বৈদ্যনাথন শঙ্করের বেঞ্চে মামলার শুনানি চলছিল। বেঞ্চের তরফে বলা হয় যে সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য স্থায়ী খোরপোশের ব্যবস্থা। দুইজন সক্ষম ব্যক্তির মধ্যে এটা ধনী হওয়া বা আর্থিক অবস্থা এক করার জন্য তা ব্যবহার হতে পারে না।
হিন্দু বিবাহ আইনের ২৫ ধারা উল্লেখ করে আদালত জানায় যে স্থায়ী খোরপোশ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আবেদনকারীর আর্থিক অবস্থা, আয়, সম্পত্তি, আচরণ সহ একাধিক বিষয় পর্যালোচনা করা দরকার। আবেদনকারী স্বাবলম্বী ও আর্থিকভাবে সচ্ছল হলে তাকে খোরপোশ দেওয়া যায় না।
আবেদনকারী মহিলা বিচ্ছেদের বিরোধিতা করেননি, বরং নিজের আর্থিক সুরক্ষার জন্য খোরপোশ দাবি করছেন বলেই পর্যবেক্ষণ রাখে দিল্লি হাইকোর্ট। বলা হয়, যখন স্বামী/স্ত্রী, বিবাহ বিচ্ছেদের বিরোধিতা করার পাশাপাশি, একই সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করলে বিচ্ছেদে সম্মতির আভাস দেন, তখন এই ধরনের আচরণ অনিবার্যভাবে ইঙ্গিত দেয় যে বিরোধিতা স্নেহ, পুনরায় মিলিত হওয়ার চেষ্টা বা বৈবাহিক বন্ধন সংরক্ষণের উপর নয়, বরং আর্থিক বিবেচনার উপর নির্ভরশীল।