
সদানন্দ ডেট, ১৯৯০ ব্যাচের মহারাষ্ট্র ক্যাডারের পুলিশ অফিসার। আজ তার জীবনেই যেন সম্পন্ন হল একটা বৃত্ত। কিন্তু হঠাৎ সব ছেড়ে তাঁকে নিয়ে আলোচনা কেন? আসলে তিনি কোন সাধারণ পুলিশ অফিসার নন। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মায়ানগরী মুম্বইতে সন্ত্রাসবাদী হামলার সেই রাত এখনও ভুলতে পারেনি গোটা বিশ্ব। ১০ জঙ্গীর ৪ দিনে ধরে চালানো দাপটে মারা গিয়েছিলেন ১৭৫ জন। কতজন যে আহত হয়েছিলেন, সেই সংখ্যাটা এখন বললাম না। সেই সময় দেশের নির্দোষ সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে জঙ্গীদের বন্দুকের নল থেকে গ্রেনেডের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়েছিল মুম্বই পুলিশ। সেই ঘটনা প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল বহু পুলিশের। আহত হয়েছিলেন অনেকে। তাঁদের মধ্যেই একজন সদানন্দ ডেট।
২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম মূলচক্রী তাহাউর রানা। দীর্ঘ টানা পোড়েনের পর অবশেষে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে তাঁকে। এবার সেই তাহাউরকে জিজ্ঞাসাবাদের দায়িত্বে রয়েছেন ২৬/১১ ঘায়েল হওয়া সেই সদানন্দ ডেট।
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর, সদানন্দ তখন সেন্ট্রাল রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ছিলেন। সন্ত্রাসবাদীরা ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাস (CSMT) স্টেশন থেকে ফুট ওভারব্রিজ পার হয়ে হাসপাতালে ঢুকে পড়েছে শুনেই কামা ও আলব্লেস হাসপাতালে ছুটে যান তিনি। ইতিমধ্যেই ৬০ জনের বেশি নিরাপরাধ মারা গিয়েছে তাঁদের গুলিতে। এবার তাঁদের পরিকল্পনা হাসপাতালকে কব্জা করার। কিন্তু হাসপাতালে সন্ত্রাসবাদীরা পড়ে সদানন্দ এবং তাঁর দলের মুখোমুখি। সন্ত্রাসবাদীদের সেই দলে ছিল আজমল কাসবও। শুরু হল দুই পক্ষের মধ্যে গুলির লড়াই।
নিঃশব্দে আড়ালে থেকে চলছে গুলির লড়াই। ফায়ারিং আবার কাউন্টার ফায়ারিং। কাসব আর তার সতীর্থ দুই জঙ্গীর একে-৪৭ এর সামনে সেদিন বীরের মতো লড়ে গিয়েছিল সদানন্দের টিম। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশকে লক্ষ করে গ্রেনেড ছোঁড়ে কাসাভরা। সেই গ্রেনেডের আঘাতে আহত হন সদানন্দ। পরবর্তীতে অবশ্য তাঁকে সাহসীকতার জন্য দেওয়া হয়েছিল রাষ্ট্রপতি পদক।
কামা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আজমল কাসব এবং তার সহযোগী আরও মুম্বই পুলিশ কর্মীদের হত্যা করে। যার মধ্যে ছিলেন তৎকালীন অ্যান্টি-টেরর স্কোয়াড (ATS)-এর প্রধান হেমন্ত কারকরে, অশোক কামটে, বিজয় সালাসকর এবং আরও অনেকে। তবে ডেট সাহেবের হস্তক্ষেপে আহত হয় একজন সন্ত্রাসী ।
ওই ঘটনার পরেও মুম্বই পুলিশের বিখ্যাত ক্রাইম ব্রাঞ্চের নেতৃত্ দিয়েছেন সদানন্দ। দায়িত্ব সামলেছেন, মহারাষ্ট্র অ্যান্টি-টেরর স্কোয়াডের প্রধান হিসাবেও। সিআরপিএফ-এও কাজ করেছেন, যেখানে তিনি বামপন্থী উগ্রপন্থা দমন সংক্রান্ত কাজ সামলেছেন। IG (Ops) হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ মাওবাদী বিরোধী অভিযানের দায়িত্বে ছিলেন। কাসাভের সাজা ঘোষণার পরে তাঁকে পুনে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ছিল সদানন্দের উপরেই। গত বছর জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA)-র Director-General হিসেবে নিয়োগ করা হয় সদানন্দকে।