নয়া দিল্লি : দেশের প্রথম সহকারিতা সম্মেলন। রাজধানীর ইন্দিরা গান্ধী ইনডোর স্টেডিয়ামে অমিত শাহ কী বলছেন, সেই দিকে আজ সকাল থেকে নজর ছিল সকলের। দেশের প্রথম সারির সমস্ত সমবায় সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন সম্মেলনে। এছাড়া ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছিলেন বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘সহকারিতা থেকে সমৃদ্ধির’যে ডাক দিয়েছেন সেই লক্ষ্যই আজ বারবার উঠে আসে অমিত শাহর ভাষণে। সামনে রেখে শনিবার এই সম্মেলনের ভাষণ দেবেন দেশের প্রথম সহকারিতা মন্ত্রী অমিত শাহ।
অমিত শাহ আজ সহকারিতা সম্মেলনে আত্মবিশ্বাসী সুরে বলেন, “৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্যপূরণে সাহায্য করবে সহকারিতা মন্ত্রক। আমাদের হয়তো আর্থিক ক্ষমতা ওত বেশি নেই, কিন্তু এত সংখ্যক সহকারি কর্মী যদি একজোট হই, তবে সমস্ত লক্ষ্যপূরণই সম্ভব। মোদীজিকে আশ্বাস দিচ্ছি যে, আপনার ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির যে স্বপ্ন রয়েছে, তা পূরণ করতে আমরা সকলে আপ্রাণ চেষ্টা করব।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, “অনেকেই প্রশ্ন করেন যে সহকারিতা মন্ত্রকের প্রয়োজন কী? আমি বলছি, বর্তমন সময়ে দাঁড়িয়ে সহকারিতা আন্দোলনে গতি আনার জন্য এই মন্ত্রকের প্রয়োজন ছিল। দেশের বিকাশে সহকারিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখনও আমাদের অনেক লক্ষ্যপূরণ বাকি, সেই লক্ষ্যপূরণে আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা করতে হবে। দেশের গরিব কৃষক, মহিলা ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষদের সামনে এগিয়ে আনার জন্য আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সহকারিতা মন্ত্রকের দ্বারাই এই উন্নতি সম্ভব।”
প্রধানমন্ত্রীর মস্তিস্কপ্রসূত সহকারিতা থেকে সমৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে দেশের প্রথম সহকারিতা মন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, “প্রতিটি গ্রামকে কোঅপারেটিভের সঙ্গে যুক্ত করে সহকারি থেকে সমৃদ্ধ করা এবং গ্রামের সমৃদ্ধি থেকে সমগ্র দেশেই সমৃদ্ধি আনাই আমাদের লক্ষ্য। সহকারিতা শব্দটি সহ এবং কারিতা- এই দুটি শব্দ মিলিত হয়ে তৈরি হয়েছে। সকলে মিলিত হয়ে এক দিশায় কাজ করাই সহকারিতার লক্ষ্য।”
কথা প্রসঙ্গে আমুল সমবায়ের দুনিয়ায় যে বিপ্লব নিয়ে এসেছে, সেই কথাও তুলে ধরেন তিনি। বলেন. আমি গুজরাটের বাসিন্দা, তাই আমুলের সূচনা দিয়েই আমি সহকারিতার প্রাসঙ্গিকতা বোঝাবো। সর্দার বল্লভ ভাই পটেলের অনুপ্রেরণাতেই আমুল সংস্থা তৈরি হয়েছিল। ১৯৪৬ সালে ব্রিটিশরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে উৎপাদিত সমস্ত দুধই একটি সংস্থার কাছে বিক্রি করে দিতে হবে। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই দুধ নিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই সময় সর্দার পটেল ভুবন ভাইকে বলেছিলেন যে, যতদিন আপনারা নিজেরা দুধ বিক্রি করার পদক্ষেপ নেবেন না, ততক্ষণ এই আন্দোলনের কোনও প্রাসঙ্গিকতা থাকবে না। সেখান থেকেই সূচনা হয়েছিল আমুলের। সেই সংস্থারই ২০২০-২১ সালে টার্নওভার ৫৩ হাজার কোটি পার করল।
ইফকো দেশের কৃষকে এক নতুন দিশা দেখিয়েছে। ১৯৬৬ সালে ৫৭টি কো-অপারেটিভ সংস্থাকে নিয়ে একটি সোস্যাইটি তৈরি করা হয়, সেটিই আজ বড় হয়ে ৩৬ হাজারেরও বেশি কো-অরপারেটিভ সংস্থাকে নিয়ে ইফকো সাড়ে পাঁচ কোটিরও বেশি কৃষককে উপকৃত করছে। কো-অপারেটিভের সবথেকে সুবিধা হল, যে পরিমাণ অর্থ লাভ হয়, তা মালিকের কাছে নয়, প্রতিটি সদস্যের কাছে পৌঁছে যায়।
অমিত শাহর বিশ্বাস কো-অপারেটিভের মাধ্যমেই আত্মনির্ভর হবে দেশ। কৃষক ভারতী কোঅপারেটিভ (KRIBHCO)-ও একই ধরনের সংস্থা। এর সদস্যদের এক বছরেই ৩১৮ কোটি টাকার লাভের অঙ্ক বিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার বিশ্বাস এই কো-অপারেটিভ সংস্থার মাধ্যমেই আমরা আত্মনির্ভর হয়ে উঠব, কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত সার আমাদের আমদানি করতে হবে না, দেশেই উৎপাদন হবে।
আর এর জন্য কো-অপারেটিভ সংস্থাগুলিকে বিদেশি নির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দেন অমিত শাহ। বলেন, “আমাদের মতো কৃষি নির্ভর দেশে ফসলের বীজ কেন বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে? কোনও কো-অপারেটিভ সংস্থা কি এই উদ্যোগ নিতে পারে না? গোটা বিশ্বজুড়ে ফুড প্রসেসিংয়ের কাজ হচ্ছে। কৃষকরা কেন পারবে না? আপনারা সকলেই কো-অপারেটিভ কী, এর শক্তি কী, সেই বিষয়ে আপনারা অবগত। এই কো-অপারেটিভ সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়েই শিল্প, বাণিজ্য ক্ষেত্রে নয়া উদ্যোগ নেওয়া হোক।”
আরও পড়ুন : National Cooperative Conference: ২০২১-২২ সালেই নতুন সরকার নীতি আনবেন প্রধানমন্ত্রী, ঘোষণা অমিত শাহের