ঐতিহাসিক! অস্ত্র ছেড়ে শান্তিচুক্তি মণিপুরের সশস্ত্র গোষ্ঠী UNLF-র

UNLF peace deal: দিন কয়েক আগেই মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং জানিয়েছিলেন, তারা যাতে অস্ত্র ত্যাগ করে শান্তির পথে ফিরে আসে, তার জন্য ইউএনএলএফ-এর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছন তাঁরা। হিংসাধ্বস্ত মণিপুরের প্রেক্ষিতে এই শান্তিচুক্তি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই শান্তি চুক্তিকে 'ঐতিহাসিক মাইলফলক' বলে, বর্ণনা করেছেন অমিত শাহ।

ঐতিহাসিক! অস্ত্র ছেড়ে শান্তিচুক্তি মণিপুরের সশস্ত্র গোষ্ঠী UNLF-র
অস্ত্র ছাড়ল মণিপুরের সবথেকে পুরনো সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট Image Credit source: Twitter

| Edited By: অমর্ত্য লাহিড়ী

Nov 29, 2023 | 6:21 PM

ইম্ফল: অস্ত্র ছেড়ে সমাজের মূল ধারায় ফিরে আসার উদ্যোগ নিল মণিপুরের সবথেকে পুরনো সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট বা ইউএনএলএফ (UNLF)। দীর্ঘ ছয় দশক ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে তারা। বুধবার (২৯ নভেম্বর), অস্ত্র ত্যাগ করার বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করল তারা। এদিন বিকেলে, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের সঙ্গে একটি ত্রিপাক্ষিক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইউএনএলএফ। প্রসঙ্গত, দিন কয়ক আগেই মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং জানিয়েছিলেন, তারা যাতে অস্ত্র ত্যাগ করে শান্তির পথে ফিরে আসে, তার জন্য ইউএনএলএফ-এর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছন তাঁরা। হিংসাধ্বস্ত মণিপুরের প্রেক্ষিতে এই শান্তিচুক্তি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই শান্তি চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক মাইলফলক’ বলে, বর্ণনা করেছেন অমিত শাহ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অমিত শাহ ইউএনএলফ বাহিনীর বেশ কিছু ছবি-ভিডিয়ো প্রকাশ করেছেন। সেই ছবি-ভিডিয়োতে ইউএনএলফ সদস্যদের তাঁদের অস্ত্র সমর্পণ করতে দেখা গিয়েছে। সঙ্গের ক্যাপশনে শাহ লিখেছেন, “একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জন করাল গিয়েছে! উত্তর-পূর্বে স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মোদী সরকারের নিরলস প্রচেষ্টা পূর্ণতা পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত হল। আজ নয়া দিল্লিতে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট। মণিপুরের উপত্যকা-ভিত্তিক প্রাচীনতম সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউএনএএফ হিংসা ত্যাগ করে মূলধারায় যোগ দিতে সম্মত হয়েছে। আমি তাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় স্বাগত জানাচ্ছি এবং শান্তি ও অগ্রগতির পথে তাদের যাত্রার জন্য মঙ্গল কামনা করছি।”


আরও এক টুইট পোস্টে অমিত শাহ লিখেছেন, “আজ ভারত সরকার এবং মণিপুর সরকারের সঙ্গে ইউএনএলএফ-এর শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় ছয় দশকের সশস্ত্র আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজির সকলের উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গির বাস্তবায়ন এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের যুবদের একটি উন্নত ভবিষ্যত প্রদানের ক্ষেত্রে এটা একটা যুগান্তকারী অর্জন।”

১৯৪৯ সালে ভারতের অংশ হয়ে উঠেছিল মণিপুর রাজ্য। ভারতের সঙ্গে স্বাধীন মণিপুর রাজ্যের একীভূত হওয়া রাজ্যের অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। তাদের মতে এই পদক্ষেপ ছিল বেআইনি। তাই, এই পদক্ষেপের বিরোধিতায় উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে বেশ কয়েকটি আন্দোলন তৈরি হয়েছিল। এই আন্দোলনগুলি থেকেই ১৯৬৪ সালের ২৪ নভেম্বর জন্ম নিয়েছিল ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট। চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘদিন এই গোষ্ঠীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাজকুমার মেঘান ওরফে সানা ইয়াইমা। ২০১০ সালে বাংলাদেশে ধরা পড়েছিলেন তিনি। এরপর, ২০১৬ সালে তাঁকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১১টি ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল এনআইএ কোর্ট। তবে, কারাগারে ভাল আচরণ এবং তাঁর বিশেষ অবদানের কথা বিবেচনা করে ২০১৯ সালের নভেম্বরে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। মুক্তির পর থেকে তিনি আর আগের জীবনে ফেরেননি। তবে, তাঁর অনুপস্থিতিতেও সার্বভৌম স্বাধীন মণিপুরের দাবিতে ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল ইউএনএলএফ। শান্তি চুক্তির ফলে, সেই যুদ্ধের অবসান ঘটল। এরপর, এই গোষ্ঠী গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অংশ নেয় কিনা, সেটাই দেখার।