নয়া দিল্লি: আদানি-হিন্ডেনবার্গ ইস্যু (Adani-Hindenburg Issue) নিয়ে বিতর্ক জারি রয়েছে এখনও। তার আঁচে চলতি লোকসভা অধিবেশনও বারবার মুলতুবি হয়েছে। বিরোধীরা আদানি ইস্যুতে তদন্তের জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠনের দাবি করে যাচ্ছে। সেই দাবি মেনে নেওয়া না হলেও সুপ্রিম কোর্টের তরফে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেবি ও সেই বিশেষজ্ঞ কমিটি তদন্ত করছে নিজেদের মতো। এবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চিত করলেন, সিবিআই ও ইডির মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি নিরপেক্ষভাব নিজেদের কাজ করছে। আর তাদের মামলাগুলির মধ্যে এক-দুটি বাদে বাকি সবই ইউপিএ জমানায় রেজিস্টার করা হয়েছে। এদিকে আদানি ইস্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, কোনও ভুল হয়ে থাকলে কারও ছাড় পাওয়া উচিত নয়।
শুক্রবার দিল্লিতে ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভে যোগ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আর এই কনক্লেভেই বর্তমানের হটটপিক আদানি-হিন্ডেনবার্গ ইস্য়ু নিয়ে শাহকে প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নিয়ে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এই কমিটি বর্তমানে তদন্ত করছে। আর এই কমিটির তদন্তে যে রিপোর্ট উঠে এসেছে তা সুপ্রিম কোর্টের কাছে জমা দিতে হবে। কনক্লেভে তিনি বলেন, “কোনও ভুল হলে কারও ছাড় পাওয়া উচিত নয়। বিচার ব্যবস্থার উপর সবাইকে ভরসা রাখতে হবে।” আদানি কোনও ভুল করে থাকলে তা মেনে নেওয়া হবে না, তা নিজের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট করে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর পাশাপাশি তিনি বলেছেন, কারও ভিত্তিহীন অভিযোগ করা উচিত নয়। আদানি ইস্যুতে তিনি আরও বলেছেন, মার্কেট নিয়ন্ত্রক সেবি আদালতে হলফনামা পেশ করে জানিয়েছেন, এই নিয়ে তারা তদন্ত করছে। শাহ বলেছেন, “সুপ্রিম কোর্ট সেবিকে তার তদন্ত চালিয়ে যেতে বলেছে। তার রিপোর্টও সুপ্রিম কোর্টে জমা দিতে হবে। সেবিকে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে এবং সেবি জানিয়েছে যে তারা তদন্ত করছে।”
এ দিন তিনি আরও বলেছেন, তদন্তকারী সংস্থার তদন্ত নিয়ে কারও সংশয় থাকে তা নিয়ে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানো যায়। তিনি বলেন, “২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের সময় কংগ্রেসের এক বড় মহিলা নেত্রী বলেছিলেন, তারা যদি দুর্নীতিতে লিপ্ত থাকে, তাহলে কেন কোনও তদন্ত হচ্ছে না। তিনি আমাদের প্রশ্ন করছিলেন। এখন যখন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তখন তাঁরা কান্না-কাটি শুরু করেছেন।” শাহ বলেছেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিও আদালতের ঊর্ধ্বে নয়। কোনও নোটিস, এফআইআর ও চার্জশিট আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানো যায়। তিনি এই প্রসঙ্গে বিরোধীদের খোঁচা দিয়ে বলেন, “আদালতে যাওয়ার পরিবর্তে তাঁরা বাইরে কেন চিৎকার করছে? আমি জনগণকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, কারও বিরুদ্ধে যদি কোনও দুর্নীতির অভিযোগ থাকে তাহলে তার তদন্ত হওয়া উচিত নয় কি? এর মধ্যে বেশিরভাগ মামলাই তাদের আমলে রেজিস্টার হয়েছিল। আমাদের সরকারের সময় নয়।”
কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জমানায় ১০ বছরে ১০ লক্ষ কোটি টাকা কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল। তাই সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণাধীন রাখার জন্য সিবিআই মারফত সেই সরকার মামলা রেজিস্টার করেছে। তিনি বলেন, যদি কোনও আর্থিক দুর্নীতি হয়ে থাকে তাহলে তার তদন্ত করতে বাধ্য ইডি। এদিকে বহু বিরোধী দলই অভিযোগ করে থাকে, যেখানে যেখানে ভোট আসন্ন সেখানেই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করে বিরোধী দলকে সায়েস্তা করতে চাইছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে অপব্যবহারের অভিযোগ করেছে বিরোধী দলগুলি। এই প্রশ্নের জবাবে বিজেপির চাণক্য বলেছেন, “তাদের আদালতের দ্বারস্থ হতে কে বারণ করেছে? তাদের দলে আমাদের থেকে বেশি ভাল আইনজীবী রয়েছেন।” তিনি এদিন জোর দিয়ে বলেছেন, সব কেন্দ্রীয় সংস্থা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে।